২০২৪ সালে ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড মেমোরি’ তালিকায় জায়গা পেয়েছে 'সুলতানার স্বপ্ন'।
Published : 08 Mar 2025, 06:56 PM
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখা 'সুলতানার স্বপ্ন' শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি নারী অধিকারের পক্ষে শক্তিশালী এক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী।
১৯০৫ সালে প্রকাশিত এই গল্পে তিনি এমন এক সমাজের কথা বলেছেন, যেখানে নারীরা শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে এবং পুরুষরা থাকে গৃহবন্দী।
এটি পুরুষের বিরুদ্ধে কোনো বার্তা নয়, বরং সমাজে নারীর প্রতি নেতিবাচক ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে রুপক প্রতিবাদ। এখানে লেখক প্রশ্ন তুলেছেন, নারীর মত পুরুষ যদি বন্দি থাকত তাহলে কেমন অনুভূতি হত।
এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুলতানা মূলত বেগম রোকেয়ারই প্রতিচ্ছবি। একদিন আরামকেদারায় বসে দোল খেতে খেতে সে স্বপ্ন দেখে এমন এক দেশ, যেখানে নারীরাই শাসন করে থাকে। সেই দেশের নাম লেডিল্যান্ড, বাংলায় যাকে বলা যায় নারীস্থান।
যেখানে নারীর শিক্ষার অধিকার আছে, তারা বিজ্ঞান চর্চা করে থাকে, এমনকি নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারেও এগিয়ে। আজ আমরা সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে কথা বললেও প্রায় এক শতাব্দীরও আগে বেগম রোকেয়া তার এই রচনায় সেটার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
গল্পটি সাম্যের কথা বলে। নারীস্থানে নারীরা বলে, 'পুরুষ দেহ, নারী মন'। সেখানে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ পুরুষরা করে, আর নারীরা গবেষণা ও সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত থাকে। যেখানে লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা উল্টে দিয়ে সমাজের প্রচলিত ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে 'সুলতানার স্বপ্ন' নিয়ে দীর্ঘদিন তেমন আলোচনা হয়নি, তবে পাশ্চাত্যে এটি নিয়ে অনেক আগে থেকেই গবেষণা হয়েছে। তৈরি হয়েছে কার্টুন অ্যানিমেশন, নির্মাণ করা হয়েছে ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় চলচ্চিত্র।
২০২৪ সালে ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড মেমোরি’ তালিকায় জায়গা পেয়েছে 'সুলতানার স্বপ্ন'। এরপর এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদারের নেতৃত্বে পাঁচজন নারী পর্বতারোহী সুলতানার স্বপ্ন হাতে শীতকালে এভারেস্টে আরোহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বইটি নিয়ে পাঠপ্রতিক্রিয়া লেখার প্রতিযোগিতা আয়োজন করে, যেখানে বিভিন্ন গ্রুপের ২৫ জন বিজয়ী হন। ওই প্রতিযোগিতায় আমি অংশ নিয়ে পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নিশাত মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
সুলতানার স্বপ্ন যুগে যুগে নারীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আজকের সুলতানারাও এগিয়ে যাক সেই স্বপ্নের পথে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।