মৃত্যু ঘটিয়ে ফিরেছে নিপা ভাইরাস

বছর ঘুরে আবার সংক্রমণ ঘটেছে নিপা ভাইরাসের এবং এতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

নুরুল ইসলাম হাসিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2013, 06:03 AM
Updated : 3 Feb 2015, 06:31 AM

চলতি শীত মৌসুমে আট বছর বয়সি একটি শিশু নিপা ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে বলে বুধবার নিশ্চিত করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

গত বছর নিপা ভাইরাস যতজনের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছিল, তার ৮০ শতাংশেরই মৃত্যু হয়।

আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঢাকায় মারা যাওয়া ওই শিশুটির বাবাও অসুস্থ। তারা দুজনই খেঁজুরের রস খেয়েছিলেন।

গত ১১ জানুয়ারি ভালুকা থেকে আনা খেঁজুরের রস খেয়েছিলেন দুজনেই। ছয়দিন পর তাদের রোগলক্ষণ ধরা পড়ে।  

শিশুটি মঙ্গলবার মারা গেলেও বুধবার বিকালে নমুনা পরীক্ষার পর আইইডিসিআর নিশ্চিত করে, সে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল।

মৃত শিশুটির পরিবারের আট সদস্যের সবাই একই রস পান করেছেন। তাদেরকে ২১ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।

সাধারণত শীতকালে বাদুরের মাধ্যমে খেঁজুরের রস থেকে মানুষে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ভাইরাস সংক্রমণের প্রায় আটদিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- জ্বর, প্রলাপ বকা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।  

মাহমুদুর রহমান বলেন, “এ রোগে একবার আক্রান্ত হলে প্রতিকার কঠিন। তবে খেঁজুরের কাঁচা রস না খেয়ে ভাইরাসটির সংক্রমণ একশো ভাগ ঠেকানো সম্ভব।”

মালয়শিয়ায় ১৯৯৮ সালে প্রথম এই ভাইরাসটির সংক্রমণের কথা জানা যায়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

অজ্ঞাত রোগ হিসেবে ২০০১ সালে দেশে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ নজরে আসে। তিন বছর পরে ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষার মাধ্যমে একে নিপা ভাইরাস বলে সনাক্ত করা হয়।

তখন থেকে এ পর‌্যন্ত দেশের ২১টি জেলায় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ১৭৬ জনের মধ্যে ১৩৬ জনই প্রাণ হারিয়েছেন।

মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, এবং ঠাকুরগাঁসহ উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের এলাকায় নিপা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। ভালুকায় এবারই প্রথম এই সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।

এটি কেন নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সংক্রমিত হয় এবং কেন নতুন জায়গায় ছড়ায় সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে যেসব এলাকায় খেঁজুর গাছ রয়েছে কেবল সেসব এলাকাতেই এর সংক্রমণ হয়।

কাঁচা খেঁজুরের রস পান নিপা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে, যশোরে অনেক খেঁজুর গাছ থাকা সত্ত্বেও সেখানে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়নি। অধ্যাপক রহমান বলেন, যশোরের বাদুর এ ভাইরাস বহন করে না বলে এমনটি হতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যদিও দাবি করছেন, ভারতীয় সীমান্ত এলাকার জেলাগুলো থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, তবে ভারতে এ ধরনের কোনো সংক্রমণের কথা নিশ্চিত করেনি দেশটি।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সকালবেলা খেঁজুরের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, যেখানে গাছ থেকে রস সংগ্রহে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না।

ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে এ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছে আইসিডিডিআরবি। তারা বলছে, বাদুরের খাওয়া ফল রসের হাঁড়িতে পড়ে গিয়ে কিংবা রস পান করার সময় বাদুরের লালায় থাকা ভাইরাস রসে মিশে যায়।

এছাড়াও, রসের পাত্রে বাদুর মলমুত্র ত্যাগ করলে তার মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

নিপা ভাইরাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যায়। তাই সংগৃহীত রস জ্বাল দিয়ে পান করা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না।

বাংলাদেশে সংক্রমণের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দেখেছে, এটি অত্যন্ত সংক্রমক এবং খুব কম সংস্পর্শের কারণেও এটি এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে।

রোগীর সেবা যত্নের সময় সতর্ক না থাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

“তবে সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত ধুয়ে নিলে এবং আলাদা আলাদা খাবার গ্রহণ করলে এর সংক্রমণ ঠেকানো যায়,” বলেন অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান।