ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রোটন বিম থেরাপিতে ‘সুফল’ মিলছে

প্রোটন বিম থেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় সুফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতের চিকিৎসকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2022, 03:59 PM
Updated : 1 July 2022, 03:59 PM

শুক্রবার বিকালে ঢাকায় বনানীর শেরাটন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি প্রয়োগের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টার (এপিসিসি)।

এটি এক ধরনের রেডিয়েশন থেরাপি, যেটির মাধ্যমে প্রোটন নামের ক্ষুদ্রকণার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা সম্ভব বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এসময় এপিসিসিতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা চালিয়ে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্যান্সার রোগীর সুফল পাওয়ার কথাও জানানো হয়।

এই সেন্টারের সিনিয়র কনসালট্যান্ট রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট ডা. স্বপ্ন নানজিয়া জানান, প্রোটন থেরাপি প্রয়োগে আক্রান্ত টিস্যুর আশেপাশে অন্যান্য সুস্থ টিস্যুর কোনো ধরনের ক্ষতি হয় না।

“ফলে ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় ক্ষতিকর টিউমার ধ্বংস করতে উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশন প্রয়োগ করা সম্ভব হয়,” যোগ করেন তিনি।

অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতে ২০১৮ সালে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এসময় বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে কেউ এপিসিসিতে চিকিৎসা নিতে চাইলে চেন্নাইয়ের এ সেন্টারে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে।

এর মাধ্যমে জটিল প্রকৃতির ক্যান্সার কোষকেও নিখুঁতভাবে নিরাময় করা সম্ভব হচ্ছে দাবি করে ডা. নানজিয়া জানান, তবে ক্যান্সার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়লে প্রোটন থেরাপি তেমন কার্যকরী চিকিৎসা দিতে পারে না।

শিশু ও বয়স্কদের চিকিত্সায় এ থেরাপি বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় এরই মধ্যে অনন্য সাফল্য দেখিয়েছে প্রোটন থেরাপি। এ মুহূর্তে অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা করা হচ্ছে মাথা ও গলার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের।”

মাথা, গলা, স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, পুরনো চিকিৎসা-পদ্ধতির তুলনায় এতে চিকিৎসা চলাকালীন ও চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে ভোগান্তি একেবারেই কম।

“রোগীকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা কিংবা নলের মাধ্যমে খাওয়ানোর মতো জটিল পরিস্থিতিরও প্রয়োজন পড়ে না।”

তিনি বলেন, “অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি থাকায় প্রতিটি টিউমারকে আমরা ধাপে ধাপে এবং স্তরের পর স্তরে পৃথকভাবে পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারি।”

এ পদ্ধতির চিকিৎসায় ১৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে বলে জানান তিনি।

অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নেওয়া জামাল উদ্দিন এ পদ্ধতিকে ফলপ্রসূ বললেও সংবাদ সম্মেলনে এর খরচ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি জানান, তার ফুসফুসে ৫ সেন্টিমিটার বড় একটি টিউমার ধরা পড়েছিল। বিভিন্ন চিকিৎসার মধ্যে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার পর তাকে ২০টি প্রোটন বিম থেরাপি নিতে বলা হয়।

“প্রোটন থেরাপি সম্পর্কে তখনও জানতাম না আমি। ডাক্তাররা আমাকে অভয় দিয়ে বললেন, এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।”

মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত তার চিকিৎসা চলে। এর চার মাস পরে পরীক্ষা করে তার ফুসফুসে টিউমারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, “আবার ছয় মাস পর আমি ফলোআপে গেলাম। তখনও দেখা গেল, টিউমারের কোনো অস্তিত্ব নেই। এখন আমি একেবারেই সুস্থ। যেটা আমি কখনও চিন্তাও করিনি।”

কেমো থেরাপির তুলনায় প্রোটন থেরাপি অনেক বেশি সহনীয় বলে জানান জামাল।