এবার ডায়রিয়ার এত প্রকোপ কেন? মন্ত্রিসভায় আলোচনা

চলতি গরমের মৌসুমে ঢাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভায়। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2022, 01:00 PM
Updated : 28 April 2022, 01:04 PM

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, ওয়াসার পানির উৎসে ‘জীবাণু না থাকলেও’ বাসাবাড়ির রিজার্ভার এবং ‘বেআইনিভাবে লাইন টানার সময়’ ছিদ্র থেকে ব্যাকটেরিয়া ছড়াচ্ছে।

আর কিছু এলাকায় পানিতে ক্লোরিনের মাত্রা কমে যাওয়াও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে তারা দেখতে পেয়েছেন।

এ অবস্থায় বিশুদ্ধ পানি পানের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বহুতল ভবনগুলোর নিচে থাকা রিজার্ভ ট্যাংক কিছু দিন পর পর পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঢাকার কলেরা পরিস্থিতি নিয়ে এই অনির্ধারিত আলোচনা হয়। পরে আলোচনার বিষয়বস্তু সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, “ঢাকায় এখন যে ডায়রিয়ার প্রকোপ সেটা গত ২০-২৫ বছরের মধ্যে বোধ হয় দেখা যায়নি।... যারা বেশিরভাগ সময় বাসার বাইরে হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করেন, তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে ব্যক্তিগত অনুসন্ধানের তথ্য তুলে ধরে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে ১০-১২ দিন ধরে ট্র্যাক করছি। আইসিডিডিআর’বি, আইইডিসিআর, ডিজি হেলথ, ওয়াসার সঙ্গে কথা বলেছি। কয়েকটি কারণ আমরা ফাইন্ড আউট করেছি। বিষয়গুলো কেবিনেটেও আলোচনা হয়েছে।

“আমরা চেক করে দেখলাম, ওয়াসার পানির সোর্সে কোথাও ব্যাকটেরিয়া নেই। অনেক বাসাবাড়িতে ওয়াসা থেকে পৃথক লাইনে মোটর দিয়ে পানি টেনে নেওয়া হয়। তখনই বাইর থেকে ব্যাকটেরিয়াটা মিশে যায়- এটা অন্যতম একটা কারণ। অলমোস্ট সব জায়গাতেই এটা হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় এবার একটু বেশি হল।”

ঢাকার ধানমন্ডিসহ আরও কিছু পুরনো আবাসিক এলাকায় নতুন করে বহুতল ভবন নির্মাণ হওয়ায় সেখানে সরবরাহের তুলনায় পানির চাহিদা বেড়ে গেছে; সে সব এলাকায় মানুষ পৃথক লাইন টানতে গিয়ে ‘পানি দূষিত করছে’ বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, “অনেক জায়গায় তো এখন হাইরাইজ বিল্ডিং হয়ে যাচ্ছে। তাদের তো আর আগের লাইনের পানিতে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। দেখা গেছে আগে ছিল তিনতলা ভবন, এখন হয়ে গেছে ১৫ তলা।

“বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি জায়গায় পানি টেস্ট করে দেখেছেন, ক্লোরিনের একটু শর্টেজ আছে। এটাও এই পরিস্থিতির একটি বড় কারণ। এটা সাথে সাথে ওয়াসাকে পয়েন্ট আউট করার ফলে তারা গিয়ে ক্লোরিন গ্রো করেছে, এটা এখন ঠিক হয়ে গেছে।”

ঢাকার ডায়রিয়া পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ৭৫ লাখ টিকা পাঠানো হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

“ডব্লিউএইচও আমাদের ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন কলেরা ভ্যাকসিন দেবে। মে মাসের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে চলে আসবে। এটার দুটো ডোজ নিলে তিন বছর পর্যন্ত কলেরা বা ডায়রিয়া থেকে সেইফ থাকবে।”

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রিকোয়েস্ট করেছেন, মানুষ যেন ট্যাংকগুলো পরিষ্কার করে। এই রিজার্ভারগুলো কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করলে ব্যাকটেরিয়া কমে আসবে। সবাইকে একটু মোটিভেট করতে হবে।”

গরমের মওসুমের শুরুতে প্রতিবছরই বাংলাদেশে কম-বেশি ডায়রিয়া হয়। তবে এবার মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে ঢাকায় ডায়রিয়ার ব্যাপক প্রকোপ দেখা দেয়। ওই সময় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩শ রোগী ভর্তি হয়েছেন ঢাকার আইসিডিডিআর,বির কলেরা হাসপাতালে, যা রেকর্ড।  

মার্চ মাসে দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ২৩৭ জন। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই ৩৬ হাজার ৯১২ জন হাসপাতালে গেছেন।

গ্রামাঞ্চলে ডায়রিয়ার জীবাণু অতটা না ছড়ালেও বিদেশগামীরা ঢাকায় এসে বিমানবন্দরের আশপাশের হোটেলে অবস্থানকালে কলেরা জীবাণুতে সংক্রমিত হচ্ছেন বলেও বিশেষজ্ঞরা জানতে পেরেছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আমাদেরকে সৌদি আরব, কুয়েত কাতার থেকে জানানো হয়েছে যে তোমাদের লোকজন যারা আসে, তাদের অনেকের মধ্যে আমরা ডায়রিয়ার জীবাণু পাচ্ছি।

“টেকনিক্যাল লোকজন বলছে, গ্রামের পানিতে কিন্তু ব্যাকটেরিয়া নেই। যারা বিদেশে যান তারা এয়ারপোর্টের আশপাশে ছোটখাটো হোটেলগুলোতে ২/৩ দিন থাকেন। সেখান থেকেই তারা ডায়রিয়ার জীবাণুর সংস্পর্শে আসেন।”

সচিব বলেন, “আমরা গত ১০-১২ দিন আগে ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিয়েছি, এখন তারা অপারেশন চালাচ্ছেন। ওয়াসার টিম গিয়ে দেখছে, হোটেলগুলো দেখছে।”