বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার বেলা ১০টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৩৪১ জন রোগী এসেছেন পেটের পীড়া নিয়ে। কিছুক্ষণ পরপরই অ্যাম্বুলেন্স, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে রোগীরা আসছেন।
শয্যা সংকুলান না হওয়ায় বাইরে তাবু টানিয়ে অস্থায়ীভাবে শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই চলছে এ অবস্থা।
চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ করে গরম চলে আসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কারণে শিক্ষার্থীদের বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় গ্রহণ এবং অনিরাপদ পানির কারণে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে গেছে।
রাজধানীর উত্তর কাফরুল এলাকার নির্মাণশ্রমিক নজরুল ইসলাম গত রাতে ভর্তি হয়েছেন আইসিডিডিআর,বিতে। বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার পর পথের ধারের একটি দোকান থেকে শরবত কিনে খেয়েছিলেন। দুপুর থেকেই তার পেট ব্যথা এবং পাতলা পায়খানা শুরু হয়।
“শরবত খায়া কাজে গেছি। হঠাৎ পাতলা পায়খানা শুরু হইল। বিকেলে বাসায় আইছি, গলির ডাক্তারের কাছ থেইকা ওষুধ কিনাও খাইছি, তাও কাম হয় না। রাইতে ১২টার দিকে বাথরুমে গিয়া পইড়া গেছি। পরে দেড়টার দিকে হাসপাতালে আইছি।”
মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার রিকশাচালক জুলহাসকে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে আইসিডিডিআর,বিতে নিয়ে আসেন তার বন্ধু মকবুল। প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ায় জুলহাস হাঁটতে পারছিলেন না। তাকে হাসপাতালের বেডে নেওয়া হয় স্ট্রেচারে করে।
মকবুল বলেন, বৃহস্পতিবার মেসে ভাত খাওয়ার সময় প্লেটে একটি মাছি পড়েছিল। মাছি ফেলে দিয়ে ওই ভাতই খান জুলহাস। পরে সন্ধ্যা থেকেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়।
কেরানীগঞ্জ থেকে দুই বছরের শিশু ওয়াজিদ ভূঁইয়াকে নিয়ে তার মা এবং নানা এসেছেন আইসিডিডিআরবির হাসপাতালে।
ওয়াজিদের নানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডায়রিয়া হওয়ার পর স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়েছিলেন। কিন্তু কমছিল না।
“নাতিডার পাতলা পায়খানা হইতেছিল। শিশু ডাক্তার দেখাইলাম, ওষুধে কাজ হইল না। সেইজন্য নিয়া আইছি হাসপাতালে।”
রাজধানীর গেণ্ডারিয়া এলাকার গৃহিনী নিশি তার দুই বছরের মেয়ে সাফাকে নিয়ে শুক্রবার ভোরে কলেরা হাসপাতালে আসেন। নিশি জানান, সাফার জমজ ভাইয়ের ডায়রিয়া হয় গত রোববার। তাকে তিনদিন কলেরা হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার থেকে সাফারও ডায়রিয়া।
আইসিডিডিআরবিতে গত মঙ্গলবার ১২৭২, বুধবার ১২৩৩ এবং বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ১১৭৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
আইসিডিডিআর,বির সহকারী বিজ্ঞানী ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি বছর গরমের মৌসুমে দৈনিক গড়ে সাড়ে সাতশ থেকে আটশ রোগী আসে তাদের এ হাসপাতালে। তবে গত কয়েকদিন ধরে তা ১২শ ছাড়িয়েছে।
তিনি জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর এবং উত্তরা এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই কলেরা আক্রান্ত। এবার আঠারো বছরের বেশি বয়সী রোগী বেশি।
ডায়রিয়া বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরমে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয়, অনিরাপদ পানি পান করায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।
“এতদিন বন্ধ থাকার পর একসঙ্গে স্কুল-কলেজ খুলেছে। বাচ্চারা এতদিন স্কুলে যেত না, বাইরের খাবারও খেত না। এখন বাইরে বের হচ্ছে, বাইরের খাবারও খাচ্ছে। এছাড়া হঠাৎ করে গরম পড়ে গেছে, মানুষ নিরাপদ পানি পান করছে না, এসব কারণে পেটের অসুখ হচ্ছে।”
ঢাকা শিশু হাসপাতালেও রোগীর চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন, হাসপাতালের পুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শফি আহমেদ।
তিনি জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন আটশ থেকে এক হাজার শিশু আসে, তাদের ১০ শতাংশই এখন ডায়রিয়ার রোগী। এ বছর ছয় মাসের কম বয়সী শিশুরাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
ডা. শফি আহমেদ বলেন, গরমকালে এমনিতেই ডায়রিয়া বাড়ে। এবার তার সঙ্গে ‘আরও কিছু কারণ’ যোগ হয়েছে।
“স্কুল খোলায় শিশুরা বাইরের খাবার বেশি খাচ্ছে। এসব খাবারে ধুলাবালি থেকে যায়। গরমে খাবার, বিশেষ করে ফাস্টফুড পচে যায়। এছাড়া অনিরাপদ পানি খাওয়ার জন্যও ডায়রিয়া হচ্ছে।”
এই চিকিৎসক বলেন, “ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে হলে নিরাপদ পানি পান করা সবচেয়ে জরুরি। এছাড়া বাইরে খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।”