কিডনি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ৭ ঘণ্টা বন্ধ, রোগীদের ভোগান্তি

বকেয়া বিল নিয়ে জটিলতায় রাজধানীর জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সাত ঘণ্টা ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ ছিল; এতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2022, 10:26 AM
Updated : 2 Feb 2022, 12:26 PM

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ডায়ালাইসিস সেবাদাতা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিল সংক্রান্ত বিষয়ের সুরাহা হওয়ায় বেলা তিনটার পর আবার রোগীদের সেবা দেওয়া শুরু হয়।

অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের মতো এ হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে রোগীদের সেবা দেওয়া শুরু হয়।

বুধবার বিকালে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। আমাদের এখানে আবার বিকালে ডায়ালাইসিস চালু হয়েছে। এখন আর কোনো সমস্যা নাই।”

এদিন ঘোষণা ছাড়াই সকাল থেকে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসা রোগীরা বেকায়দায় পড়েন।

দীর্ঘ সময়েও জরুরি এ সেবা চালু না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়া রোগীদের ক্ষুব্ধ স্বজনরা পরে শেরে বাংলা নগরে এ হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। ফলে মিরপুর সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়।

রোগীরা বলছেন, হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবার দায়িত্বে থাকা কোম্পানি স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড বকেয়া টাকার জন্য সেবা বন্ধ করে দেয়।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আল আমিন বারী সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস নিতে এ হাসপাতালে আসেন। কিন্তু বুধবার এসে জানতে পারেন, ডায়ালাইসিস বন্ধ রয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা সকাল ৬টার সময় এসেছি। দেখি তালা মারা। বলছে ডায়ালাইসিস দিতে পারছে না। কারণ জিজ্ঞেস করলাম, তারা বলে সরকারের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে না। তাই ডায়ালাইসিস দিতে পারবে না।”

দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ হলে তা সাধারণত সারে না। এমন ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা কিডনি ফেইলিউরের শেষ ধাপে পৌঁছে গেলে তখন রোগীর ডায়ালাইসিস করাতে হয়।

সুস্থ মানুষের দেহে রক্ত শোধন করে খনিজ ও পানির ভারসাম্য বজায় রাখে কিডনি। সেটা যখন কাজ করে না, তখন ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে রক্ত শোধন করতে হয়।

গত ১৩ বছর ধরে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতে হয় আল আমিন বারীকে। তিনি বলেন, “আমাদের যখন ডায়ালাইসিস নিতে দেরি হয়, তখন শ্বাসকষ্ট অনেক বেড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ডায়ালাইসিস করাতে না পারলে জীবনমরণ সমস্যা হয়ে যায়।”

জসিম উদ্দিন লিটন নামে আরেকজন রোগী বলেন, “কিছু দিন পরপরই এরা টাকার জন্য ডায়ালাইসিস বন্ধ রাখে। তাতে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।”

এ বিষয়ে স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের কারো বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর জানতে পারেনি।

দুপুরে বকেয়া বিলের কারণে সেবা বন্ধ থাকার বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান ডায়ালাইসিস সেবা যাতে বন্ধ না থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।

তখন তিনি বলেন, “হাসপাতালের নিয়মিত রোগীদের ডায়ালাইসিসের বিল বাকি নাই। করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য হাসপাতাল থেকেও এই হাসপাতালে এসে ডায়ালাইসিস করিয়েছে অনেক রোগী। অতিরিক্ত রোগীর জন্য যে বিল হয়েছে, সেটা বাকি আছে।”

কোভিডের কারণে কুর্মিটোলা ও মুগদা হাসপাতাল থেকেও রোগী এসেছে জানিয়ে পরিচালক বলেন, “এজন্য এক্সট্রা পেমেন্ট দিতে হবে, সেটা তারা চাচ্ছে। এই পেমেন্টও তারা পেয়ে যাবে, কিছুটা সময় দরকার।”

দেশে কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় এ বিশেষায়িত হাসপাতালে একজন রোগীর একবার ডায়ালাইসিস নিতে দুই হাজার ৭০০ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ৫১০ টাকা। বাকি টাকা হাসপাতাল বহন করে। প্রতিদিন এখানে প্রায় দুইশজন রোগীর ডায়ালাইসিস করা যায়।