আলাদা দেহ পেতে লাবিবা-লামিসার অপেক্ষা বাড়ল

শারীরিক কিছু জটিলতার কারণে চিকিৎসকদের প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার চেষ্টাতেও জমজ শিশু লাবিবা-লামিসার জোড়া লাগা দেহ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা যায়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2021, 01:11 PM
Updated : 13 Dec 2021, 01:11 PM

দুই বছর আট মাস বয়সী দুই বোনের জোড়া লাগা দেহ আলাদা করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোমবার সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার চলে।

পরে সাময়িকভাবে অস্ত্রোপচার স্থগিত করে চিকিৎসকদের ৩২ সদস্যের দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর আবারও তারা চেষ্টা করবেন।

চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে থাকা শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আশরাফ-উল হক কাজল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে সর্বশেষ পরিস্থিতি তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সোমবারই তারা শিশু দুটিকে আলাদা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের সময় দেখা যায়, তাদের শরীরের কিছু অংশ খুবই কাছাকাছি হওয়ায় সেগুলোকে পৃথক করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।

“এখন তাদের আলাদা করতে গেলে দুটি শিশুর মধ্যে একজনের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই আমরা আজকের মত তাদের পৃথক না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এই চিকিৎসক জানান, শরীরের যেসব অংশ আলাদা করতে সমস্যা হচ্ছে, সেখানে পর্যাপ্ত টিস্যু বৃদ্ধির জন্য চামড়ার নিচে ‘টিস্যু এক্সপ্লেন্ডার বল’ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

“প্রতি সপ্তাহে তাতে স্যালাইন পুশ করা হবে, এতে করে বলটির আকার আস্তে আস্তে বড় হবে। এভাবে টিস্যুটি বৃদ্ধি পাবে, এবং পৃথক করার জন্য পর্যাপ্ত টিস্যু থাকবে। তখন দ্বিতীয় ধাপে আবারও অস্ত্রোপচার করা হবে।”

সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি শেষ হতে আরও ছয় থেকে আট সপ্তাহ লাগতে পারে বলে জানান শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান।

নিলফামারীর জলঢাকা উপজেলার যদুনাথপুর গ্রামের লাল মিয়া-মনুফা বেগম দম্পতির সন্তান লাবিবা-লামিসা। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল উপজেলা সদরের একটি ক্লিনিকে তাদের জন্ম হয়।

জোড়া শিশু দুটির যখন নয় দিন বয়স, তখন রংপুর মেডিকেলে গেলে তাদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেসময় তাদের এক দফা অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা এক বছর পর আসতে বলেন।

সোমবার দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের সময় ঢাকা মেডিকেলের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তাদের বাবা মা এবং স্বজনরা।

অস্ত্রোপচার শেষে শিশু দুটির বাবা লাল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ভাবছিলাম আজকেই বাচ্চা দুইটাকে আলাদা দেখতে পাব। কিন্তু সেটা সম্ভব হয় নাই। ডাক্তাররা যা ভালো মনে করছেন, সেটাই করছেন।

“এখানে আর তো কিছু বলার নাই। দুই বছর আট মাস যেহেতু অপেক্ষা করলাম, আরও কয়দিন অপেক্ষা করতে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। আমরা শুধু চাই বাচ্চা দুইটা আলাদা হয়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করুক।”

পেশায় রাজ মিস্ত্রির সহকারী লাল মিয়া এর আগে জানিয়েছেন, গ্রামের অনেকেই তাদের সহায়তা করেছেন। এছাড়া লাবিবা-লামিসার চিকিৎসার খরচ হাসপাতাল থেকেই দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন