‘কথা বল, কথা বলি’

করোনাভাইরাস মহামারীতে স্বজন হারিয়ে যারা ভেঙে পড়েছেন, তাদের মনের ক্ষত সারাতে নামছে বিএসএমএমইউর মনোরোগ চিকিৎসকরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2021, 03:21 PM
Updated : 9 Nov 2021, 03:41 AM

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান মনের খবর ও অধীর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চালু হওয়া ‘কথা বল, কথা বলি’ কার্যক্রমে এই সেবা দেবেন তারা।

এই কার্যক্রমের আওতায় সেবা প্রত্যাশীদের টেলিফোনে পরামর্শ দেবেন বিএসএমএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চিকিৎসকরা।

এজন্য ফোন করতে হবে ০১৪০৭৪৯৭৬৯৬ নম্বরে, শুক্রবার ছাড়া যে কোনো দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে।

সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রায় দুই বছর আগে বিশ্বে নেমে আসা করোনাভাইরাস মহামারীতে বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ মারা গেছেন। এখন মৃত্যু কমে এলেও কয়েকমাস আগে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল।

কোভিড-১৯ এ মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, বন্ধুবান্ধব ও মৃত ব্যক্তির সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, স্বজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু শোক ও কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কষ্ট হচ্ছে বা ফিরতে পারছেন না, এমন ব্যক্তিরা বিনামূল্যে এই চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।

এই সেবা টেলিফোনে দেওয়া হলেও যদি চিকিৎসকের মনে হয়, তবে কাউন্সেলিংয়ের জন্য  রোগীকে হাসপাতালে ডাকা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

‘কথা বল, কথা বলি’র সমন্বয়ক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল, বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খানসহ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, “করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা দীর্ঘমেয়াদী নানা মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। মানসিক সমস্যা থেকে শারীরিক নানা জটিলতায়ও ভুগতে পারেন তারা। এই কার্যক্রম তাদের অনেকটা উজ্জীবিত করতে পারবে।”

করোনাভাইরাসে মৃতের স্বজনরা কেন এই সেবা নেবেন- এর ব্যাখ্যায় বিএসএমএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহীদ বলেন, কারও স্বজন মারা গেলে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী- এই দুটো মানসিক প্রভাব।

“প্রাথমিক প্রভাব চলার সময় তার সাহায্য চাওয়ার ক্ষমতা থাকে না। আবেগে এতটাই বেশি থাকে যে কোনো যুক্তি থাকে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মোকাবেলায় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন। অনেকে কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু আগের মতো কাজে মনোযোগ নাই। এক্ষেত্রে আমরা তাদের সহায়তা করতে পারব।”

তিনি বলেন, “কোভিড সংক্রমণ শেষের দিকে, এখনই স্বজন হারা মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া জরুরি।

“কারও কাছে মানুষ যখন হারায় তখন তার বুকের ভেতর একটা কষ্ট জমাট বাঁধে। জমাট এই বরফ গলাতে আমাদের এই কার্যক্রম সহায়তা করবে।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট অধ্যাপক ডা. মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, কারও স্বজন মারা গেলে মানুষ ‘অধিক শোকে পাথর’ হয়ে যায়। এই পাথরটা ভাঙতে হবে।