কোভিড টিকার আওতায় এল স্কুল শিশুরাও

ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল বাংলাদেশে। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2021, 05:42 AM
Updated : 1 Nov 2021, 11:02 AM

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার সকালে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের এই টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

সবার আগে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ পায় আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী মাহজাবিন তমা এবং একই ক্লাসের তাহসান হোসেন। দেশে আপাতত কিশোর বয়সী শিক্ষার্থীদের এই টিকাই দেওয়া হবে।

গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ১২০ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে এই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। তাদের কারও কোনো সমস্যা না হওয়ায় এখন সারা দেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার কাজ শুরু হল। 

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের টিকাদান শুরু হয়েছিল। এবার ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীরাও সেই তালিকায় এল।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে বলেন, মঙ্গলবার থেকে ঢাকার আটটি কেন্দ্রে এক যোগে কিশোর বয়সীদের টিকাদান চলবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৫ হাজার করে দৈনিক ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে।

“এরপর আমরা ঢাকার বাইরে ২১টি জেলায় টিকাদান শুরু করব। পর্যায়ক্রমে উপজেলাতেও শিশুদের টিকা দেওয়ার চিন্তা আছে। বাংলাদেশের একটি শিশুও টিকার বাইরে থাকবে না।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে প্রায় ৩ কোটি ডোজ টিকা লাগবে। সরকারের কাছে এখন ফাইজারের ৮০ লাখ ডোজের বেশি টিকা আছে। আরও টিকা পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “তোমরা সবাই টিকা পাবে। টিকা নেওয়ার পর স্কুলে আস। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নইলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার আসবে।”

স্কুলের শিশুদের টিকার আওতায় আনায় স্বাস্থ্য বিভাগকে ধন্যবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিশুদের টিকার আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

দীপু মনি বলেন, “আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছি, কিন্তু সীমিত আকারে। কিন্তু টিকাদান কার্যক্রম যত সফল হবে তত দ্রুত স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম চালু করতে পারব। আমরা আশা করছি, নতুন বছরের শুরু পর্যন্ত আমরা টিকাদান কার্যক্রমে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারব।”

টিকা পেতে স্কুল শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হচ্ছে; তারপর মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে টিকা নেওয়ার তারিখ ও টিকাদান কেন্দ্রের নাম জানানো হবে। টিকা নেওয়ার সময় টিকা কার্ড প্রিন্ট করে নিয়ে যেতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সহায়তায় ঢাকায় আটটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্য সব স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হবে।  

এগুলো হল- বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার হার্ডকো স্কুল, মালিবাগের সাউথ পয়েন্ট স্কুল, গুলশানের চিটাগাং গ্রামার স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ, ধানমণ্ডির কাকলী স্কুল, উত্তরার সাউথ ব্রিজ স্কুল এবং মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুল।

ফাইজারের টিকা দেওয়া এবং ডাইলুয়েন্ট মিশ্রণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রয়োজন হয়। এ কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়েছে।

টিকা নেওয়ার পর কোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. লোকমান হোসেন মিঞা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর মিলার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।