আরও ২৫ লাখ ডোজ ফাইজারের টিকা এল

করোনাভাইরাসের টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি আরও ২৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে পৌঁছেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2021, 04:26 AM
Updated : 28 Sept 2021, 04:26 AM

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে একটি কার্গো উড়োজাহাজে করে মঙ্গলবার ভোরে টিকার এই চালান ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছায় বলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান জানান।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিএমএসডি ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা টিকার চালান বুঝে নিয়েছেন। সেগুলো বিমানবন্দর থেকে ওয়্যারহাউজে পাঠানো হয়েছে।

এ নিয়ে ফাইজার-বায়োএনটেকের ৩৬ লাখ ৪ হাজার ৪৮০ ডোজ টিকা পেল বাংলাদেশ। এর পুরোটাই এসেছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। 

গত ৩১ মে প্রথম চালানে ১ লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজারের টিকা আসে। ১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় চালানে আসে আরও ১০ লাখ ৩ হাজার ৮৬০ ডোজ টিকা। ২১ জুন দেশে ফাইজারের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়।

এবার যে ২৫ লাখ ডোজ এসেছে, তা যুক্তরাষ্ট্র সরকার অনুদান হিসেবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দিয়েছে। আগামীকে আরও টিকা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে পাঠাবে বলে এক টুইটে জানিয়েছেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার।

 

ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ করতে হয় হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ফলে এ টিকা সংরক্ষণ করতে আল্ট্রা কোল্ড ফ্রিজারের প্রয়োজন হয়। আর পরিবহনের জন্য থার্মাল শিপিং কনটেইনার বা আল্ট্রা ফ্রিজার ভ্যান লাগে।

সাধারণ রেফ্রিজারেটরে ২ ডিগ্রি থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হলে এ টিকা ৫ দিন পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী থাকে। আর রেফ্রিজারেটরের বাইরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ টিকা দুই ঘণ্টা টেকে।

সংরক্ষণ আর পরিবহনে জটিলতার কারণে প্রাথমিকভাবে কেবল ঢাকায় বাছাই করা কয়েকটি কেন্দ্রে ফাইজারের টিকা দেওয়া হয় সে সময়।

এখন ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের সক্ষমতা আরও বেড়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি জায়গায় ২১টি ফ্রিজার পাওয়া গেছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও আরও ২৯টি নতুন ফ্রিজার কিনছে।

“আমরা জানতাম না কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউটগুলোয় এ ধরনের টিকা রাখার সক্ষমতা আছে। তারা বীজ সংরক্ষণের জন্য এ ধরনের ফ্রিজার রাখে। এ ধরনের বেশকিছু সোর্স আমরা পেয়েছি, একুশটার মত। আরও ২৯টি ফ্রিজ আমরা কিনতে দিয়েছি। এটা নভেম্বরের মধ্যে আমরা পেয়ে যাব। সেক্ষেত্রে আমাদের নতুন করে আর কিছু লাগবে না, আমরা ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ করতে পারব।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফাইজারের টিকা যে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, তাতে বাংলাদেশে ৭০ লাখ ডোজ টিকা সংরক্ষণ করা যাবে।”

বাজারে যত টিকা আছে, তার মধ্যে কেবল ফাইজারের টিকাই ১৮ বছরের কম বয়সীদের দেওয়া যায়। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের এ টিকা দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষামূলকপ্রয়োগে আরও কম বয়সীদের জন্যও এ টিকা নিরাপদ বলে প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছে ফাইজার-বায়োএনটেক।

বাংলাদেশেও স্কুলশিশুদের ফাইজারের টিকা দেওয়ার একটি আলোচনা ছিল। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন করলে তবেই বাংলাদেশ শিশুদের টিকা দেবে।

ফাইজার ছাড়াও কোভ্যাক্সের আওতায় মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশ পাচ্ছে।

অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোও যাতে করোনাভাইরাসের টিকার ন্যায্য হিস্যা পায়, তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস ‘কোভ্যাক্স’ নামে এই প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে।