প্রতিমাসে এক কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে প্রতি মাসে এক কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2021, 01:36 PM
Updated : 1 Sept 2021, 03:03 PM

বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকার দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন বলেন, ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত এক কোটি ৮২ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ জনকে টিকার প্রথম ডোজ এবং ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ১৬৯ জনকে দ্বিতীয় ডোজসহ মোট দুই কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ১৮৭ ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।

“মজুদ রয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৩ ডোজ। টিকা সংগ্রহ এবং বিনামূল্যে প্রদান কাজ চলমান রয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতি মাসে যাতে এক কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়া যায়, তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিনোফার্ম হতে পাওয়ার শিডিউল অনুযায়ী অক্টোবর মাস থেকে প্রতি মাসে দুই কোটি হিসেবে ডিসেম্বরের মধ্যে ৬ কোটি টিকা পাওয়া যাবে।”

করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা বিশ্বের সকল উৎপাদনকারী সংস্থার সাথেই যোগাযোগ স্থাপন করেছি। এর মধ্যে কেবল ভারতের সেরাম ইনিস্টিটিটিউ থেকে সাড়া পাই এবং অগ্রিম টাকা দিয়ে তিন কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের চুক্তি করি।

“অন্যান্য উৎপাদনকারী সংস্থা হতে টিকা পাওয়ার কোন সাড়া (তখন) পাওয়া যায়নি। পরে কেবল চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি হতে সাড়া পাওয়ার সাথে সাথে উদ্যোগ গ্রহণ করি। এর মধ্যে সিনোফার্মের সাথে চুক্তি হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য সমাঝোতা চুক্তিও হয়েছে।”

বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের আটটি টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।

এগুলো হল: ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, রাশিয়ার তৈরি স্পুৎনিক-ভি, চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকার বিবিআইবিপি-সিওরভি (BBIBP-CorV), চীনের সিনোভ্যাকের টিকা করোনাভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি করা  কোমির্নাটি, মডার্নার স্পাইকভ্যাক্স, জনসন অ্যান্ড জনসনের জ্যানসেন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং চীনের ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি অব দ্য চাইনিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্স (আইএমবি ক্যাম্পস) উদ্ভাবিত নতুন একটি টিকা, যা এখনও পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য বাংলাদেশ জক্তি করলেও এ পর্যন্ত এসেছে ৭০ লাখ ডোজ। এছাড়া চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে টিকা কিনছে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে জনসনের টিকা কেনার জন্য আলোচনার কথা এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। 

টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশ ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্নার পাশাপাশি সিনোফার্ম এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও পাচ্ছে।

নদী ভাঙ্গন ও অন্যান্য

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার নদী ভাঙ্গনের স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। বন্যা থেকে রক্ষা, নদী ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ, নদী শাসন, নাব্যতা রক্ষাসহ সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সগন বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ গ্রহণ  করা হয়েছে।

“এতে সারা দেশকে সাতটি নদী বেসিনে বিভক্ত করে সমীক্ষা সম্পাদন হচ্ছে। ইতোমধ্যে কর্ণফুলী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর বেসিন ভিত্তিক সমীক্ষা শেষ হয়েছে। পানি প্রবাহের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীগুলোকে স্থিতিশীল রাখা ও যথাযথ পলি ব্যবস্থাপনা কৌশল অনুসরণ করে কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে দেশের বন্যা ঝুঁকি হ্রাস ও নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ভাঙ্গন রোধ করে টেকসই উন্নয়নের কাঙ্খিত অর্জন সম্ভব হবে।”

মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে গত ৪ বছর ধরে দেশীয় গবাদিপশু দিয়েই কোরবানির ঈদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।

গত ঈদুল আযহার সময় কোরবানিযোগ্য গবাদীপশু সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭০০টি। আর কোরবানী হয়েছে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। অর্থ্যাৎ প্রায় ২৮ লাখ পশু উদ্বৃত্ত ছিল।

গত ১২ বছরে দেশে দুধ উৎপাদন ৫ গুণ ও ডিমের উৎপাদন ৪ জুন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।