কোভিড ব্যবস্থাপনা নিয়ে ‘অসন্তোষ’ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে

দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদানসহ কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ‘অসন্তুষ্টির’ কথা এসেছে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2021, 03:26 PM
Updated : 17 August 2021, 03:27 PM

অপর্যাপ্ত টিকার সংগ্রহ নিয়ে গণটিকার আয়োজন, কঠোর লকডাউন চলাকালে হঠাৎ করে তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া, শহরে ও গ্রামাঞ্চলে ভিন্ন ধরনের টিকা কার্যক্রম পরিচালনাসহ নানা বিষয়ে ‘অব্যস্থাপনার’ কথা সভায় জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টিকা ব্যবস্থাপনা, করোনার তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা, বক্তব্য রাখার ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা নিয়ে কমিটির সদস্যদের অনেকে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

“দেখবেন, এখন সবাই কোভিড বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এখানে একটি জাতীয় পরামর্শক কমিটি আছে। কিন্তু এর বাইরেও সরকারের অনেকে করোনাভাইস, টিকা এসব নিয়ে কথা বলছে। যার বক্তব্য দেওয়া উচিত, তিনি বাদে অন্যরা বক্তব্য দেন। এসব কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।”

ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে অতিকথনের কারণে সরকারের সফলতা ম্লান হচ্ছে। কমিটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে বলেছে। এ বিষয়গুলোর সমন্বয় প্রয়োজন। সেটাই কমিটিতে সদস্যরা আলোচনা করেছেন।”

টিকার সংখ্যা নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে জানিয়ে মানিক বলেন, “কত আসছে, কত দেওয়া হচ্ছে, কত মানুষকে দেওয়া যাবে- এগুলো নিয়ে সুনির্দষ্ট চিন্তা থাকতে হবে। সেগুলি নেই বলে কমিটির সদস্যদের মনে হয়েছে।”

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য গত বছরের শেষ দিকে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। সেই টিকার প্রথম চালান পাওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণ টিকাদান শুরু হয়।

কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে টিকার সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ। পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ২৫ এপ্রিল দেশে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

তখন সরকার অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করে। চীন থেকে জরুরিভাবে সিনোফার্মের টিকা কেনার চুক্তি করা হয়। এখন সিনোফার্মের টিকার পাশাপাশি কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ।

কিছু টিকা হাতে পাওয়ার পর মহামারীর বিরুদ্ধে সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে গত ৭ অগাস্ট থেকে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে ছয় দিনের গণটিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করে সরকার।

তাতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া মিললেও সরবরাহ কম থাকায় অনেককে টিকা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনারও অভিযোগ আসে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকে গণটিকা নিয়েও কথা হয়েছে। দেশের মানুষ ১৭ কোটি। কিন্তু এক কোটি টিকার সংগ্রহ নিয়ে গণটিকার ঘোষণা কী করে সম্ভব? এই ধরনের কার্যক্রম সরকারকে বিব্রত করে।”

“গণটিকা চালুর ফলে অনেকে কেন্দ্রে গিয়ে তাৎক্ষণিক টিকা পেয়েছেন। কিন্তু আগে যারা টিকার নিবন্ধন করেছেন তারা স্বল্পতার কারণে আগে টিকা পারছেন না। আগে নিবন্ধন করেও তারা বঞ্চিত হলেন।”

দেশে কঠোর লকডাউন চলাকালে কোনো ধরনের আগাম ঘোষণা ছাড়াই পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বলে জানান ওই সদস্য।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “চিন্তার কিছু নেই। যেসব সমস্যা রয়েছে তা সহসাই ঠিক হয়ে যাবে।”

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কোভিডে মারা যাওয়া ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা’ দ্রুততম সময়ে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের সুপারিশপ্রাপ্ত ডাক্তারদের দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার জন্যও কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।

শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য আফম রুহুল হক, মুহিবুর রহমান মানিক, মো. মনসুর রহমান, মো. আব্দুল আজিজ, সৈয়দা জাকিয়া নুর এবং মো. আমিরুল আলম মিলন বৈঠকে অংশ নেন।