বঙ্গভ্যাক্সের ট্রায়ালের অনুমোদন দিতে উকিল নোটিস

দেশীয় কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দিতে স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2021, 10:40 AM
Updated : 26 July 2021, 02:18 PM

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে ‘বঙ্গভ্যাক্স’ টিকা বানর বা শিম্পাঞ্জির শরীরে প্রয়োগ করে তা পরীক্ষা করার শর্ত দিয়ে গ্লোব বাবায়োটেককে দেওয়া বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) চিঠি প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়েছে নোটিসে।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে রেজিস্ট্রি ডাক ও সংশ্লিষ্টদের ইমেইলে সোমবার নোটিসটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। 

স্বাস্থ্য সচিব ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) পরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পাঠানো হয়েছে ওই নোটিস।

আইনজীবী সাত্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে বঙ্গভ্যাক্স টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে বানর বা শিম্পাঞ্জির শরীরে পরীক্ষা করার শর্ত দিয়ে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) গত ২২ জুন গ্লোব বায়োটেককে যে চিঠি দিয়েছে তা যেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করে নৈতিক অনুমোদন দেওয়া হয়। অথবা ফাইজার বা মডার্নার টিকার মত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলাকালে বানরের শরীরেও প্রয়োগের শর্ত দেওয়া হয়, সে দাবি জানানো হয়েছে নোটিসে।”

এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টরা পদক্ষেপ না নিলে নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হবে বলে জানান এই আইনজীবী। 

নোটিস পাঠানোর আগে গ্লোব বায়োটেক কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে আমি তাদের মতামত জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে জানিয়েছেন যে তারা কোনো আইনি পদক্ষেপ নেবেন না। তাই জনস্বার্থ বিবেচনায় এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি নোটস পাঠিয়েছি।”  

দেশে করোনাভাইরাসের মহামারী শুরুর পর গত বছর ২ জুলাই ওষুধ প্রস্ততকারী গ্লোব ফার্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক টিকা তৈরির কাজ শুরুর কথা জানায়। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খরগোশের ওপর এ টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ‘সফল’ হয়েছে।

পরে গত বছর ৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক জানায়, ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করেও তাদের ওই সম্ভাব্য টিকা ‘কার্যকর ও সম্পূর্ণ নিরাপদ’ প্রমাণিত হয়েছে। গ্লোব বায়োটেকের উদ্ভাবিত তিনটি সম্ভাব্য টিকা পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডকে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের অনুমতি দেয়। এরপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি চেয়ে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) আবেদন জমা দেয় গ্লোব।

দীর্ঘদিন পর গত ২২ জুন বিএমআরসি একটি চিঠি দিয়ে গ্লোব বায়োটেককে জানায়, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে বানর বা শিম্পাঞ্জির শরীরে প্রয়োগ করে তার এ টিকা পরীক্ষা করতে হবে। তারপরই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

উকিল নোটিসে বলা হয়, বানর বা শিম্পাঞ্জির শরীরে পরীক্ষা চালাতে হলে তৃতীয় পক্ষের গবেষণাগার (থার্ড পার্টি রিসার্চ ল্যাব) প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো গবেষণাগার নেই।

গ্লোব বায়োটেক এ বিষয়ে ভারত ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, এ মুহূর্তে তাদের হাতে সময় নেই এবং এ ধরনের পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে হবে সরকারের মাধ্যমে।

নোটিসে বলা হয়, “এটা স্পষ্ট যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন না দিয়ে বানর বা শিম্পাঞ্জির শরীরে ট্রায়ালের জন্য শর্ত জুড়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে এই ভ্যাকসিনটি যাতে আলোর মুখ না দেখে।”