কোভিড: ‘চাপ সামলাতে’ চিকিৎসকদের গণবদলি

করোনাভাইরাস মহামারী ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ‘চাপ সামলাতে’ সহস্রাধিক চিকিৎসককে একসঙ্গে বদলি করেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2021, 09:45 AM
Updated : 6 July 2021, 12:01 PM

৪ ও ৫ জুলাই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অন্তত ৪৮টি আদেশে ১ হাজার ২৩৯ জন চিকিৎসককে বুধবারের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সেখানে তারা কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালন করবেন।

উপসচিব জাকিয়া পারভিনের স্বাক্ষরে এসব প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তাদের ‘সংযুক্তিতে পদায়ন’ করা হল।

যেসব চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মেডিকেল কলেজ থেকে একই মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে, একই জেলার জেনারেল হাসপাতাল বা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা পাশের কোনো জেলায় তাদের পাঠানো হয়েছে।

দেশে করোনাভাইরাসের এই জটিল পরিস্থিতি আর লকডাউনের মধ্যে গণবদলির কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত চিকিৎসকদের বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে।

“হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসকরা এই চাপ সামাল দিতে পারছেন না। ফলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই তরুণ চিকিৎসকদের বদলি করা হয়েছে।

“তারা একটু কম প্রেশারে আছে। আমাদের অন্যান্য হাসপাতালে অন্যান্য ডাক্তাররা খুব প্রেশারে পড়ে গেছে রোগীর চাপে। তারা সামলাতে পারছেন না। তাদের সহায়তা করতেই মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসকদের ডেকে আনা হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য।”

“এটা কারও ব্যক্তিগত বিষয় না। ওই জায়গায়ই আছে, সেখানে অ্যাটাচমেন্ট করে দেওয়া হয়েছে।”

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় নিয়োজিত মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসকদের অনেককেও বদলি করা হয়েছে করোনাভাইরাস ডেডিকেটেড হাসপাতালে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকসহ মোট ১৩ জন চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। তাদের মধ্যে মাইক্রোবায়োলজিতে এমফিল করা শিক্ষক আছেন ৫ জন। করোনাভাইরাসের আরটিপিসিআর ল্যাবগুলোতে তারা কাজ করতেন। তাদেরও বদলি করে দেওয়া হয়েছে।

বদলির আদেশ পাওয়া একজন চিকিৎসক এই আদেশকে ‘অদ্ভুতুড়ে’ বলছেন।

“আমরা পিসিআরে কাজ করছি। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের আওতায় এসব ল্যাব চালু থাকে। এখন আমাদের ট্রান্সফার করে দেওয়ার ঘটনা অদ্ভুতুড়ে। মজার ব্যাপার হল, ডেন্টাল সার্জনদেরও করোনা ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে!”

চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজের (এফডিএসআর) যুগ্ম-মহাসচিব ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বদলি একটি সরকারি প্রক্রিয়া, এটা নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকার কথা নয়। কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যারা শিক্ষক, তাদেরও বদলি করা হয়েছে।

“যারা শিক্ষক তাদেরও ক্লিনিক্যাল ইস্যু দেখতে বলা হয়েছে। এতে খানিকটা সমস্যা হবেই। কিছু বিষয়ের শিক্ষক আছেন যাদের কাজ শুধু পড়ানো, যেমন মাইক্রোবায়োলজি। তাদের ক্লিনিক্যাল কোনো এক্সপোজার নাই। সে রকম একজন শিক্ষককে যদি আপনি মাঠ পর্যায়ে দিয়ে বলেন যে রোগী দেখ, তার কাছ থেকে আউটপুট পাওয়া যাবে না। বরং তার মধ্যে হতাশা কাজ করবে।”

বদলি হওয়া চিকিৎসকদের লকডাউনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে সময় দেওয়া হয়েছে দুই দিন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “মেডিকেল কলেজের পাশেই হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।”

অনেক চিকিৎসককে মেডিকেল কলেজে লাগোয়া হাসপাতালে বদলি করা হলেও এক জেলা থেকে আরেক জেলায়, উপজেলায় বদলি করা হয়েছে এমন চিকিৎসকের সংখ্যাও কম না।

দেখা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে বাগেরহাটে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ থেকে মেহেরপুরে, যশোর মেডিকেল কলেজ থেকে নড়াইল এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতালে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ থেকে যশোর জেলা হাসপাতালে।

বরিশাল মেডিকেল কলেজ থেকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল, ঝালকাঠি জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ থেকে বরগুনা জেলা হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে শিক্ষকদের।

সবচেয়ে বেশি ১৫৬ জন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে চট্গ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে। খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতাল, ফেনী জেলা হাসপাতাল. দাগনভূঁইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও পাঠানো হয়েছে তাদের কাউকে কাউকে।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের বান্দরবানে. কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের ব্রাহ্মণাবাড়িয়া জেলা হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।

নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বদলি করা হয়েছে চাঁদপুর জেলা হাসপাতাল এবং লক্ষ্মীপুর জেলা হাসপাতালে।

সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ এবং পাবনা মেডিকেল কলেজ থেকে থেকে নাটোর জেলা হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক সদর হাসপাতাল বদলি করা হয়েছে।