ভারতে টিকা নীতিতে ফের পরিবর্তন

টিকা নীতিতে আরেক দফা পরিবর্তন এনে আগামী ২১ জুন থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2021, 07:00 AM
Updated : 8 June 2021, 07:00 AM

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা, সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া মোদীর ভাষণে ভারতের টিকা নীতিতে দফায় দফায় পরিবর্তনের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরা হয়।

ঘোষণা অনুযায়ী সব রাজ্যে টিকা সরবরাহের ব্যবস্থা করবে কেন্দ্রীয় সরকার। সেজন্য রাজ্য সরকারকে আলাদা করে আর কোনো খরচ দিতে হবে না।

সম্প্রতি কেন্দ্রের টিকা নীতির সমালোচনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যগুলোকে টিকা কিনে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন।

আহ্বান অনুযায়ী সমস্ত রাজ্যকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ভাষণে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “দরিদ্র-উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্ত সমস্ত দেশবাসীকেই বিনামূল্যে টিকা দেবে সরকার।”

মোদী বলেন, “ভারতে উৎপাদিত মোট টিকার ৭৫ শতাংশ কিনে নেবে কেন্দ্র। বাকি ২৫ শতাংশ পাবে বেসরকারি হাসপাতাল।”

টিকা দিতে বেসরকারি হাসপাতালে ১৫০ টাকার বেশি সার্ভিস চার্জ রাখা যাবে না বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

কীভাবে চলছে ভারতের টিকাদান কর্মসূচি?

চাহিদা অনুযায়ী করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। সংক্রমণের ধাক্কায় গত এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে এক লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে গণ টিকাদান শুরুর পর ২৩ কোটি ১০ লাখ মানুষকে ওই কর্মসূচির আওতায় এনেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার এই দেশটি।

এখন পর্যন্ত ১৩৫ কোটি মানুষের এই দেশটিতে মাত্র ১৪ শতাংশ লোক টিকার একটি ডোজ পেয়েছেন, য যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের তুলনায় অনেক কম। টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন প্রাপ্তবয়স্ক ৯৫ কোটি মানুষের ৫ শতাংশ।

সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড এবং ভারতীয় কোম্পানি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে ভারতে।

টিকা নীতিতে পরিবর্তন কিসে?

প্রাথমিকভাবে ৩০ কোটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে এবছর টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ভারত সরকার। পরে পয়লা মে থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে টিকার আওতায় আনার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও জুনের আগ পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না বাড়ায় দেশজুড়ে টিকার ঘাটতি দেখা দেয়।

ওই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দেয়, প্রত্যেক রাজ্য সরকারকে উৎপাদনকারী কোম্পানির কাছ থেকে কিনে কিংবা আমদানি করে ১ মে থেকে ৪৫ বছরের নিচে সব প্রাপ্তবয়স্ককে টিকা দেওয়া শুরু করতে হবে।

টিকার জন্য অনেক রাজ্য আন্তর্জাতিক দরপত্র দিলেও তাতে সফল হয়নি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ঘাটতি থাকায় টিকার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে রাজ্যগুলোকে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে।

সোমবার এই টিকা নীতির পরিবর্তন এনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা দেন, ২১ জুন থেকে কেন্দ্রীয় সরকার প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে বিনামূল্যে টিকা দেবে। বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কেউ টিকা কিনতে চাইলে তার দামও বেঁধে দেওয়া হয়।

টেলিভিশন সম্প্রচারিত ওই ভাষণে মোদী প্রতিশ্রুতি দেন, টিকা নিয়ে যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে ঠিক করা হবে।

জানুয়ারির শুরুতে অনুমোদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কেনার জন্য আগাম কোনো চুক্তি করেনি মোদী সরকার। এই প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত টিকা জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়ার দুই সপ্তাহ পর টিকা কেনার একটি চুক্তি হয়। 

গণটিকাদানের গতি বাড়াতে গত সপ্তাহে অননুমোদিত একটি টিকা কেনার জন্য আগাম চুক্তি করে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই টিকা ভারতে চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় রয়েছে।

মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে ভারতের চিকিৎসা কর্মকর্তারা বারবার বলছিলেন, প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকার বলছে ডিসেম্বরেরর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে কোভিড- ১৯ টিকার আওতায় আনা হবে।