কোভিড-১৯: মুখে খাওয়ার ওষুধ কতদূর

বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল, সে সময় ২০২০ সালের শুরুতেই বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এবং বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা তৎপর হয়েছিলেন কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা এবং ওষুধ উদ্ভাবনের জন্য।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2021, 07:43 AM
Updated : 23 May 2021, 07:43 AM

তারপর পেরিয়ে গেছে প্রায় দেড় বছর। মাহামরীর প্রথম ঢেউ নেমে আসার আগেই একাধিক টিকা উদ্ভাবনের ঘোষণা এসেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত মুখে খাওয়ার কোনো কার্যকর ওষুধ বাজারে আনতে পারেনি কোনো কোম্পানি।

তবে কোভিড-১৯ ঠেকানোর পিল উদ্ভাবনের চেষ্টা থেমে নেই। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে অগ্রগতির কিছু চিত্র উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ইনকরপোরেশন কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য চিকিৎসা পদ্ধতির খোঁজে ২০২০ সালের শুরুতে কেমিস্ট ও বিজ্ঞানীদের একটি দল গঠন করে, যাকে তারা ‘সোয়াট টিম’ নাম দেয়।

বিশ্বের অন্যতম বড় এই ওষুধ কোম্পানি কোভিড-১৯ এর টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা শুরুর পাশপাশি একটি মুখে খাওয়ার পিল তৈরির জন্যও কাজ শুরু করে, যা সংক্রমণ বৃদ্ধিকে থামাতে পারবে। সেই পিল হবে অনেকটা টামি ফ্লুর ওষুধের মত, যা ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত।

কেমিস্ট ও বিজ্ঞানীদের দলটি দ্রুতই ফাইজারের পরীক্ষাগারে বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেন। তবে এক বছরের বেশি কেটে গেলেও, এখনও বড়-আকারে সেই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা যায়নি। তবে তারা আশা করছে, জুলাইয়ে সেই প্রক্রিয়া তারা শুরু করতে পারবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মুখে খাওয়ার পিল উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছে ফাইজারের প্রতিদ্বন্দ্বী ওষুধ কোম্পানিগুলোও। যাদের মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেরক অ্যান্ড কোম্পানি ইনকরপোরেশন এবং সুইজারল্যান্ডের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি রোশ হোল্ডিংস এজি।

এসব কোম্পানি নিজস্ব পিল উদ্ভাবনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, যেগুলো কোভিড-১৯ রোগের প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে মানুষ সেবন করতে পারবে।

তাদের সাধারণ লক্ষ্য হল, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হওয়া রোগীদের মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়া এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এড়ানোর সুযোগ করে দিয়ে এই মহামারীর চিকিৎসায় যে শূন্যস্থানটি আছে তা পূরণ করা।

কিন্তু মহামারী শুরুর দেড় বছর পরেও, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে সহজে-প্রয়োগযোগ্য কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।

ফাইজার এবং তাদের জার্মান সহযোগী বায়োএনটেকের উদ্ভাবিত টিকাসহ কোভিড-১৯ প্রতিরোধী একাধিক টিকা বাজারে এলেও চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আগের মতই রয়ে গেছে।

ফাইজারের অভিজ্ঞতা বলে- এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধ প্রস্তুত করা সহজসাধ্য নয়।

টিকার ক্ষেত্রে যে সুবিধাটি পাওয়া যায়, সরাসরি মানবদেহে প্রবেশ করালে তা দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মিলে গিয়ে দেহকে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সুরক্ষিত করে তোলে। কিন্তু একটি ভাইরাস-প্রতিরোধী পিলের ক্ষেত্রে কাজটি হবে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়ে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো এবং একইসঙ্গে দেহের সবল কোষগুলোর ক্ষতি না করা।

ভাইরাস-প্রতিরোধী ওষুধ পরীক্ষা করাও কঠিন বলে জানিয়েছেন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানীর কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, সংক্রমণের শুরুর দিকেই ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, সেক্ষেত্রে যাদের ওপর প্রয়োগ করা হবে তেমন রোগী খুঁজে বের করাটা জরুরি।

কোভিড-১৯ আক্রান্তদের একটি অংশের ক্ষেত্রে খুবই হালকা উপসর্গ দেখা যায় বা অনেকের উপসর্গ ধরাও পড়ে না। কিন্তু পরীক্ষামূলক ব্যবহারে প্রমাণ পেতে হবে যে রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর ওষুধটির অর্থবহ প্রভাব রয়েছে।

গত সপ্তাহে গ্রিসের একটি সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে ফাইজারের প্রধান নির্বাহী অ্যালবার্ট বোরলা বলেন, এ বছরের শেষ দিকে তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোভিড-১৯ পিলের জন্য জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চাইতে পারেন।

“এ মুহূর্তে এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে যে আমরা সফল হতে পারি।”

ফাইজার এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, মুখে খাওয়ার ওষুধ প্রস্তুত করতে সাধারণত কয়েক বছর সময় লাগে। সেই তুলনায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধে পিল উদ্ভাবনের কাজটি দ্রুততার সঙ্গেই করতে পারছেন তারা।

মেরক এবং রোশও সম্প্রতি তাদের মুখে খাওয়ার ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শেষ পর্যায়টি শুরু করেছে এবং তারাও আশা করছে এ বছরের শেষ নাগাদ তাদের পিল কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।

রিডগেব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস এলপির সঙ্গে অংশীদারীত্বের মাধ্যমে পিল প্রস্তুত করছে মেরক। অন্যদিকে রোশের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে আছে আটি ফার্মাসিউটিক্যালস ইনকরপোরেশন।

বিভিন্ন দেশের সরকার করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনের জন্য তহবিলের যোগান দিলেও ফাইজার, মেরক ও রোশ জানিয়েছে, এই মহামারী ঠেকাতে মুখে খাওয়ার ভাইরাস-প্রতিরোধী ওষুধ উদ্ভাবন ও উৎপাদনের জন্য তারা কোনো সরকারি তহবিল পায়নি।