ঢাকা ডেন্টাল হাসপাতালে পরীক্ষা মেলে না

“সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে না, এটা কেমন কথা?” ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন সুমাইয়া ইসলাম।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2021, 07:48 PM
Updated : 18 May 2021, 07:48 PM

মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন এই শিক্ষার্থী দাঁতের চিকিৎসার জন্য। তাকে কয়েকটি পরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হলেও একটিও এই হাসপাতালে করাতে পারেননি তিনি।

ঢাকার মিরপুরের মনিপুরের বাসিন্দা সুমাইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। পরীক্ষার মানও ভালো। কিন্তু তারা ব্যবস্থা রাখে নাই।”

একই অভিজ্ঞতা হল ঢাকার মানিকদী থেকে আসা গৃহবধূ নূর জাহানেরও। দাঁতের ক্ষয় হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ছয় মাস ধরে। একটা দাঁত ফেলে দিতে হয়েছে।

শুরু থেকেই বেশ কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু একটা পরীক্ষাও এই হাসপাতাল থেকে করাতে পারেননি।

গত মঙ্গলবার আসার পর আর ব্যবস্থাপত্রে ওপিজি (অর্থোপেন্টোমোগ্রাম) করানোর কথা লিখে দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু কাউন্টারে এসে দেখেন পরীক্ষা হচ্ছে না। পরে পাশের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে হয় তাকে।

নূর জাহান বলেন, “আইজ পর্যন্ত যতগুলা পরীক্ষা দিছে, সবগুলাই বাইরে থেকে করাইছি। এইখানে আসলে কয় পরীক্ষা হয় না।”

কেন পরীক্ষা হচ্ছে না- খবর নিতে গিয়ে জানা গেল, সরকারি এই হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ এবং প্যাথলজি বিভাগে প্রয়োজনীয় এক্স-রে ফিল্ম এবং রি-এজেন্ট নেই গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে।

এ কারণে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে মাত্র একটা পরীক্ষা হচ্ছে, আর প্যাথলজি বিভাগে গত ছয় মাস ধরে সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ।

হাসপাতালের বহির্বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে নানা পরীক্ষার কথা লিখে দিচ্ছেন। সেগুলো করাতে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাচ্ছেন রোগীরা। বহির্বিভাগের বাইরে এবং ফটকে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিরাও রোগীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি আছেন।

হাসপাতালে পরীক্ষাগুলো করাতে পারলে রোগীদের খরচ যেমন কমত, তেমনি সময় বাঁচত।

ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হাসপাতালের রেজিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে নানা ধরনের ৩৭টি পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকার মধ্যে এসব পরীক্ষা করা যায়। এখন পেরিএপিক্যাল ভিউ নামে দাঁতের একটি এক্স-রে ছাড়া আর সব পরীক্ষা বন্ধ।

ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে রক্ত এবং প্রস্রাবের ৬৯টি পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় নানা এসব পরীক্ষা করা যায়।

বহির্বিভাগ ছাড়াও হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের কোনো অস্ত্রোপচারের আগে নিয়মমাফিক কিছু পরীক্ষা করাতে হয় প্যাথলজি বিভাগ থেকে। প্রতিদিন ৫০ জনের বেশি অস্ত্রোপচার হয় এখানে।

সবচেয়ে বেশি হয় রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সিবিসি এবং প্রস্রাবের কয়েকটি পরীক্ষা। করে সিবিসি এবং প্রস্রাবের পরীক্ষার যন্ত্রও বিকল।

কোনো কাজ না থাকায় প্যাথলজি বিভাগের দুজন মেডিকেল অফিসার এবং কর্মচারীরা সারাদিন বেকার সময় কাটাচ্ছেন।

সমস্যার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বোরহান উদ্দিন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফিল্ম এবং রি-এজেন্ট কেনাকাটা করতে হয় টেন্ডারের মাধ্যমে। আগের পরিচালক অবসরে যাওয়ার আগে টেন্ডার করেন নাই। যে কারণে এই সমস্যাটি তৈরি হয়েছে।

“সরকারি মালামাল চাইলেই কেনা যায় না। এজন্য আমি যোগ দেওয়ার পর টেন্ডার আহ্বান করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এটার কাজ চলছে।”

এই হাসপাতালের একটি মাত্র সিটিস্ক্যান মেশিন ছিল। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে তা মহাখালীর ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে তা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে সিটিস্ক্যানও বন্ধ।

পরিচালক দাবি করেন, এমআরআই ‘টুকটাক’ করা যাচ্ছে। কিন্তু রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন নষ্ট, নতুন করে সেটআপ না দিয়ে পরীক্ষা করা যাবে না।

গত জানুয়ারিতে অবসরে যাওয়া ঢাকা ডেন্টাল কলেজের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্যাথলজি বিভাগের রি-এজেন্ট কেনার জন্য বরাদ্দ কম পাওয়া যায়। যে কারণে সব সময় তা কেনা যায় না।

“বরাদ্দ আনার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আমি সাড়ে চার বছরের মেয়াদে মন্ত্রণালয় থেকে পারমিশন নিয়ে তিন বার কিনতে পেরেছিলাম। আর পারি নাই। বাজেট না থাকলে টাকা দেয় না। যখন পেয়েছি, তখন ভালোমতো চলেছে। যখন পাইনি তখন আমি কোত্থেকে দেব বলেন?”

সাবেক পরিচালক বলেন, “এমন সময় আমি অবসরে গেছি যে আর কিনতে পারি নাই।”

যাওয়ার আগে ক্রয়প্রক্রিয়া শেষ করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই টাইমে করলে অডিট একটা ব্যাপার। আমি না থাকলে আমার অডিট কে দেখবে? না দেখলে কথাবার্তা ঠিকমতো না বলতে পারলে অডিটররা ঠিকমতো বুঝবে না। ভুল বুঝবে, আপত্তি দিয়ে যাবে-এ ধরনের সমস্যা হবে।”