কোভিড: ভারতের গ্রামগুলোতেও বাড়ছে সংক্রমণ, বাড়ছে বৈশ্বিক উদ্বেগ

দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির কারণে বিপর্যস্ত ভারতে বড় শহরগুলোর পর এখন প্রত্যন্ত এলাকাতেও পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2021, 08:02 AM
Updated : 13 May 2021, 08:02 AM

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার এই দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মোট সংখ্যা বুধবার আড়াই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যশিবিরে মৃত্যুর মিছিল আর স্বজনদের আহাজারির হৃদয় বিদারক চিত্র উঠে এসেছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।

ফেব্রুয়ারিতে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর রোগীর চাপে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কর্মীদের ভেসে যাওয়ার অবস্থা হয়, একই হাল হয় শ্মশান ও মর্গগুলোর।

সংক্রমণের এই ঢেউয়ের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি ভারত পেরিয়ে এসেছে, নাকি পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতে করোনাভাইরাসের যে ধরনটি ছড়িয়ে পড়েছে, এর দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতায় উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। ইতোমধ্যে বিশ্বের তিন ডজনের বেশি দেশে পৌঁছে গেছে ভাইরাসের ওই ভারতীয় ধরনটি।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের রাশ টানতে দ্রুত টিকাদানের দাবি জানাচ্ছেন। পাশাপাশি টিকার উৎপাদন বাড়াতে এবং অন্য দেশ থেকে জরুরি জীবনরক্ষা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সহায়তা চাইছেন।

দিল্লির উপ মুখ্যমন্ত্রী মনিশ সিসোদিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “এখন মানুষ যেভাবে মারা যাচ্ছে, মহামারীর তৃতীয় বা চতুর্থ ঢেউ এলেও একইভাবে মারা যাবে।”

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে মারা গেছে রেকর্ড চার হাজার ২০৫ জন, নতুন সংক্রমিত হয়েছেন তিন লাখ ৪৮ হাজার ৪২১ জন।

সেদেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সরকারি হিসাবে দুই কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, বাস্তবে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি।

বিভিন্ন শহরের গাড়ি রাখার স্থানগুলোকে শ্মশানে রূপান্তর করা হয়েছে, সৎকারের সরঞ্জাম ও জায়গার অভাবে অনেকেই স্বজনের মরদেহ গঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন বলে খবর আসছে। বিভিন্ন এলাকায় নদীতে মরদেহ ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে। অক্সিজেন, শয্যা, ওষুধের ঘাটতির কারণে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনেক হাসপাতালে।

ভাইরোলজিস্ট শহীদ জামিলের বরাতে ইনডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, “দৈনিক গড়ে চার লাখ সংক্রমণের আশপাশেই আমরা অবস্থান করছি। এখনও এটা বলা সময় হয়নি যে আমরা মাহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের চূড়ায় পৌঁছেছি।”

বৈশ্বিক সংক্রমণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, পৃথিবীতে এখন প্রতিদিন যত মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে, তার অর্ধেক এবং মোট মৃত্যুর ৩০ শতাংশই হচ্ছে ভারতে।

ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের বি.১.৬১৭ ধরনটি এখন পুরো বিশ্বের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

প্যান অ্যামেরিকান হেলথ অরগানাইজেশন জানিয়েছে, অ্যামেরিকা মহাদেশের ছয়টি দেশে ভারতীয় ধরনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। ধরনটি খুবই সংক্রামক হওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন।

ব্রিটেনে এই ধরনটির উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সম্ভাব্য সব সমাধানের পথ খুঁজে দেখছে, যাতে স্থানীয়ভাবে এর সংক্রমণ রোধ করা যায়।

এদিকে এই ধরনটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের সদস্য দেশগুলোকে বলেছে, খুব জরুরি বিষয় ছাড়া ভারতের সঙ্গে সব ধরনের ভ্রমণ যেন স্থগিত রাখা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরগুলোকে বিধ্বস্ত করার পর ভাইরাসের সংক্রমণের হার এখন ভারতের গ্রামাঞ্চলেও ঊর্ধ্বমুখী, অথচ গতমাসে ওইসব অঞ্চলে এই হার কিছুটা কমছিল।

উত্তর প্রদেশের সরকারি তথ্য বলছে, এ রাজ্যে শনাক্ত রোগীর হার গত মাসের তুলনায় দুই-তৃতীয়াংশ বেড়েছে, আর নতুন রোগী বাড়ছে মূলত গ্রাম অঞ্চলে।

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে এ সপ্তাহে অর্ধেকের বেশি সংক্রমণের তথ্য এসেছে গ্রাম থেকে, গত মাসেও যা ছিল এক তৃতীয়াংশের মত।

রয়টার্স লিখেছে, সংক্রমণ বাড়ায় নাজেহাল পূর্বাঞ্চলীয় বিহার রাজ্যের অবস্থাও। ওই রাজ্যের ভাগলপুরে একটি হাসপাতালে দেখা গেল, একজন সন্তানসম্ভবা নারী তার কোভিড আক্রান্ত স্বামীর সেবা করছেন, যিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে সেখানে ভর্তি।

ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল ইনডিয়া টুডেকে ওই নারীর ভাই বলেন, “এখানে কোনো চিকিৎসক নেই, আমার সারারাত এখানেই ছিলেন রোগীর শুশ্রুষার জন্য।”

হাসপাতালের বাইরের করিডোরে দেখা গেল, দুই ছেলে তাদের বাবার মরদেহ জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। বিলাপ করে তারা বলছে, তাদের বাবাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে একটি শয্যা দেওয়া হলে হয়তো বাঁচানো যেত।

অন্যান্য রাজ্যেও গ্রামাঞ্চলে একই চিত্র দেখা গেছে। সেসব জায়গায় চিকিৎসা সেবা ও সরঞ্জামের জন্য আহাজারি বাড়ছে বলে জানানো হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।