দেশে এল করোনাভাইরাসের টিকা

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে অনেক প্রত্যাশার টিকার প্রথম চালান বাংলাদেশে পৌঁছেছে; প্রতিবেশীর জন্য উপহার হিসেবে ভারত সরকার এই টিকা পাঠিয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2021, 05:42 AM
Updated : 21 Jan 2021, 12:06 PM

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা পৌঁছে যাওয়ায় দ্রুতই দেশে টিকাদান শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট ২০ লাখ ডোজ টিকার এই চালান নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক টুইটে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেয় ভারত, ‘ভ্যাকসিনমৈত্রী’ তারই নজির।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল টিকা বুঝে নিতে উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দরে। তাদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তারাও। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, টিকার চালান বুঝে নিতে বিমানবন্দরে থাকবেন তিনি। তবে পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বিমানবন্দরে যাচ্ছেন না মন্ত্রী।

কাস্টমস এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে বেলা সোয়া ১২টার দিকে বিমানবন্দর থেকে দুটি ফ্রিজার ভ্যানে করে পুলিশ প্রহরার মধ্যে টিকার বাক্স নিয়ে যাওয়া হয় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা ইপিআই স্টোরেজে।

‘ভ্যাকসিনমৈত্রীর’ আকাশী রঙের ব্যানারে ঢাকা সেই ভ্যানের গায়ে আঁকা ছিল দুই দেশের পতাকা, লেখা ছিল- ‘ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণের জন্য উপহারস্বরূপ ভারতে উৎপাদিত ২০ লাখ ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন।’

এই ফ্রিজার ভ্যানে করে বিমানবন্দর থেকে টিকা নিয়ে রাখা হয়েছে ইপিআই স্টোরেজে

বেলা ১টার দিকে ইপিআই স্টোরেজে ইপিআইয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাওলা বক্স, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম, তেজগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বুলবুলসহ কর্মকর্তারা টিকা বুঝে নেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. রওশন জাহান আলো জানান, মোট ১৬৭টি বাক্সে করে আনা হয়েছে এসব টিকা। প্রতি বাক্সে ১২ হাজার করে মোট ২০ লাখ ৪ হাজার টিকা এসেছে উপহারের চালানে।

তেজগাঁওয়ে ইপিআই স্টোরেজে টিকা রাখার পর কিছু টিকা নেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। সেখানে উপহার গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়।

ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে টিকার দুটি বক্স তুলে দেন।

বাংলাদেশ সরকারিভাবেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে, যার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শুরুতে ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে টিকাদান শুরুর পরিকল্পনা হলেও টিকা আগে পাওয়ায় প্রয়োগের সময়ও এগিয়ে আনা হয়েছে।

স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ২৭ বা ২৮ জানুয়ারি টিকা প্রয়োগ শুরু করতে চান তারা।

“প্রথম দিন চিকিৎসক, নার্স, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, সাংবাদিকদের একজন করে প্রতিনিধিকে টিকা দেওয়া হবে। আমরা প্রথম দিন এরকম ২০ থেকে ২৫ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। আমরা কাজ করছি এই ২০-২৫ জন কারা হবেন।”

প্রথমে যে টিকা দেওয়া হবে, তা হবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। ঢাকা মেডিকেল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে প্রাথমিকভাবে এই টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য সেবা সচিব।

উপহারের টিকা নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি এসেছে মুম্বাই থেকে। ছবি: ভারতীয় হাই কমিশন

দুপুরে ইপিআই স্টোরেজে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি বলেন, এখান থেকে টিকা বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো শুরু হবে। টিকা বিতরণের জন্য একটি জাতীয় পরিকল্পনা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী টিকা দেওয়া হবে।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় টিকার একটি ট্রায়াল রান করা হবে। কবে হবে তার সময়সূচি নির্ধারণের অপেক্ষায় আছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

“প্রধানমন্ত্রী টিকাদান কার্যক্রম শুরুর সময় যুক্ত হবেন। আমরা সময়সূচির অপেক্ষায় আছি, সেটা পেলে ট্রায়াল রান করব। আগামী সপ্তাহে আরও ৫০ লাখ ডোজ আসবে। ট্রায়াল রানের পর এই ৭০ লাখ ডোজ সারাদেশে পাঠাব।”

প্রথমে যারা টিকা পাবেন, সেই তালিকায় ভিআইপিরা আছেন কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সব শ্রেণির মানুষই টিকা পাবে।

“যাদের প্রয়োজন তাদের আগে টিকা দেব। আমাদের দেশের মানুষ টিকা নিয়ে অভ্যস্ত। মানুষ ভ্যাকসিন নিতে ভয়ও পায় না।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে টিকা নেবেন কি না এমন প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর না দিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলমসহ কর্মকর্তারা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।