অ্যান্টিজেন: ২৫ দিনে ১৭০৪ নমুনা পরীক্ষা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত শনাক্তে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরুর ২৫ দিনে দেশের ২৯টি জেলায় ১ হাজার ৭০৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2020, 04:50 PM
Updated : 29 Dec 2020, 04:50 PM

এই হার বেশ কম বলে সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করছেন। তবে তারা বলছেন, গোটা দেশেই মানুষের নমুনা পরীক্ষা করানোর আগ্রহ কম, সেটা অ্যান্টিজেনই হোক কিংবা আরটি- পিসিআর। আর লক্ষণ-উপসর্গ থাকলেই কেবল অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করায় তাও এতে ভূমিকা রাখছে।

গত মার্চে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা চলছিল, যা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।

তবে এই পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের পর ফল পেতে বেশ সময় লেগে যায়, খরচও বেশি। তাছাড়া সব জায়গায় এ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরিও নেই।

সেই কারণেই সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী অ্যান্টিজেন পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় সরকার। আরটি-পিসিআর পরীক্ষার সুবিধা নেই এমন ১০টি জেলায় গত ৫ ডিসেম্বর এই পরীক্ষা ‍শুরু হয়। ১৯ ডিসেম্বর তা ২৯ জেলায় সম্প্রসারিত হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া একটি তথ্যে দেখা গেছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ২৯১টি নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা করা হয়েছে।

এ সময় সবচেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে গাইবান্ধায়, ২৭২টি। সবচেয়ে কম ৪৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে পঞ্চগড় জেলায়।

১৯ থেকে ২৬ ডিসেম্বর- এই সাত দিনে মাত্র দুটি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে শরীয়তপুর জেলায়।

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. এস এম আবদুল্লাহ-আল-মুরাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ অনেকটা রিলাক্টেনড হয়ে গেছে। আক্রান্তের হার কম বিধায় মানুষের সাহস বেড়ে গেছে।

“আর অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হয় জ্বর আসার পাঁচ দিনের মধ্যে। অনেকে নমুনা দিতে আসেন এই সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পর। এ কারণে নমুনা নেওয়া যায় না। নমুনা কম পাওয়ার এটাও কারণ।”

পরীক্ষায় মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম দেখছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহও।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অনেকের করোনাভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গ থাকলেও নমুনা পরীক্ষা করাতে আসে না।

“এই সময় ভাইরাল ডিজিজ হচ্ছে অনেক। ইনফ্লুয়েঞ্জা,ফ্লুর লক্ষণও করোনা ভাইরাসের লক্ষণের কাছাকাছি। এ কারণে অনেকে মনে করছে, এমনিতেই সেরে যাবে, পরীক্ষা করানোর দরকার কী?”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লক্ষণ-উপসর্গ থাকলেই অ্যান্টিজেন করা হচ্ছে-এই নীতির কারণেই অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

“আমরা এক পর্যায়ে বলেছিলাম, পেশেন্ট আসলে সে পজেটিভ না নেগেটিভ, তা জানার জন্য অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। কারণ তাতে দ্রুত শনাক্ত করে রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব। যদি আরটিপিসিআর করি তাহলে দুই-তিন সময় লাগে।

“একটা লোকের লক্ষণ উপসর্গ কিছুই নাই, কিন্তু আক্রান্ত কারও সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করেছে সে কারণে আক্রান্ত কি-না নিশ্চিত হওয়ার জন্য পিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে সিম্পটম না থাকলে অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে না।”

এছাড়া হাসপাতালে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করার আগ্রহটা কমে গেছে। এটা যে কোনো কারণেই হোক,” বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখের বেশি মতো অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট মজুদ আছে। এগুলো পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় আরও কিট নিয়মিত আসতে থাকবে।

নমুনা পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ কম কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষের আগ্রহের বিষয় নয়, মূল বিষয় হলো অ্যান্টিজেন টেস্টের বৈজ্ঞানিক ভিত্তিটা কী?

“যেদিন একটা মেসেজ দেওয়া হয়েছিল অ্যান্টিজেন টেস্ট কাকে করা হবে। আপনি, আমি গেলেও হবে না। যদি লক্ষণ-উপসর্গ না থাকে। যাদের লক্ষণ-উপসর্গ আছে শুধু তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা প্রযোজ্য। আমাদের আমাদের ৮০ ভাগ মানুষ লক্ষণ-উপসর্গহীন। এ কারণে কাদের আগ্রহ আছে, সেটা মুখ্য নয়।”

দেশে নতুন করোনাভাইরাস শনাক্তে এখন পর্যন্ত ৩১ লাখ ৮৪ হাজার ৫২৭টি (অ্যান্টিজেনসহ) নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার ৮০ জনের। এই রোগে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭ হাজার ৪৭৯ জন।