কোভিড-১৯: নমুনা সংগ্রহে ‘অব্যবস্থাপনা’
কাজী নাফিয়া রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 24 Nov 2020 11:59 PM BdST Updated: 24 Nov 2020 11:59 PM BdST
-
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে; রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার সকাল থেকেই ছিল মানুষের ভিড়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
-
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে; রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার পরীক্ষার জন্য নেওয়া হচ্ছে নমুনা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
-
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে; রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার সকাল থেকেই ছিল মানুষের ভিড়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
-
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই ছবি গত অগাস্টের, তখন করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানোর জন্য আসা মানুষের সংখ্যা কমে গিয়েছিল।ছবি: মাহমুদ জামান অভি
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যে যখন নিবিড় কাজ হওয়ার কথা, তখন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও এই অবস্থায় মহামারী নিয়ন্ত্রণে আদতে সরকার কতটুকু আন্তরিক, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।
শীত শুরু হতে না হতেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে, দুয়েকদিন পর পর বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা একেবারেই হচ্ছে না।
কিন্তু ল্যাবরেটরিগুলোতে সরকারের নজরদারি না থাকায় যথার্থ কারণ জানা যায়নি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকার সিভিল সার্জন ও পরীক্ষাগারগুলোর কাছ থেকে এসেছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা সঠিক ব্যবস্থাপনায় হচ্ছে না; মহামারী নিয়ন্ত্রণে তদারকিতে শিথিলতা রয়েছে।
মাঝে দেশে করোনাভাইরাসে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দেড় হাজারের মতো থাকলেও এখন তা দুই হাজারের ঘরে ওঠানামা করছে; বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭০০ এর নিচে ছিল। এর মধ্যে অধিকাংশ দিনই দেড় হাজারের কম ছিল। ২ নভেম্বর শনাক্ত রোগী এক হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে যায়। এরপর তা বাড়তে বাড়তে মঙ্গলবার দুই হাজার ২৩০ জনে দাঁড়িয়েছে।
১৩ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত করোনাভাইরাসে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ এর নিচে ছিল। এরপর থেকে ৩০ এর ঘরে ওঠানামা করছে। ১৭ নভেম্বর তা বেড়ে ৩৯ জনে দাঁড়ায়।
কোভিড-১৯: শীতে সতর্ক হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই ছবি গত অগাস্টের, তখন করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানোর জন্য আসা মানুষের সংখ্যা কমে গিয়েছিল।ছবি: মাহমুদ জামান অভি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গণমাধ্যমে প্রতিদিন যে হালনাগাদ তথ্য পাঠায়, তাতে দেখা যাচ্ছে রোববার (২২ নভেম্বর) পর্যন্ত শেষ দুই সপ্তাহে ঢাকার ৬৬টি ল্যাবের মধ্যে ৩৫টিতে এক থেকে একাধিক দিন কোনো নমুনা সংগ্রহ বা পরীক্ষা হয়নি।
সরকারি হিসাবে, গত দুই সপ্তাহের ১০ দিনই ১০ শতাংশের বেশি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ বা পরীক্ষা শূন্য ছিল, কোনো কোনো দিন এমন ৩০ শতাংশের বেশি ল্যাবে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এই ১৪ দিনের মধ্যে আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে ৯ দিন, সিআরএল ডায়াগনস্টিকে ৮ দিন, সেন্টার ফর মেডিকেল বায়োটেকনোলজি, ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ও আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ দিন, ডিএমএফআর মলিক্যুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ও ডায়নামিক ল্যাব ৬ দিন, ডা. লাল প্যাথ ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড ও বসুন্ধরা মেডিকেল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৫ দিন, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ও স্টেম হেলথ কেয়ারে ৪ দিন, ডিএনএ সল্যুশন লিমিটেড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, আইদেশী ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে ৩ দিন কোনো নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়, তাতে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সবচেয়ে বেশি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা শূন্য থাকছে।
কোভিড চিকিৎসা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো এমন বড় সরকারি হাসপাতালেও শুক্রবার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা না হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
এর মধ্যে আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যকে খারিজ করে প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হচ্ছে বলে দাবি করেছে।
কোনো কোনো দিন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা শূন্য থাকার কথা স্বীকার করে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিআরএল ডায়াগনস্টিকসের মার্কেটিং ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অনেক সময় নমুনা কম হলে সেদিন আমরা পরীক্ষা করি না। পরের দিনের সাথে করি। তাই ওই দিনেরটা শূন্য চলে আসে। পরে একসাথে করে পাঠিয়ে দেই।”

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে; রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার সকাল থেকেই ছিল মানুষের ভিড়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই শুক্রবার নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে।
হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা এখানে কাজ করে, তাদেরও তো ছুটির দরকার।”
করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত অধিকাংশ ল্যাবেই যে নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে না, তা স্বীকার করেছেন ঢাকার সিভিল সার্জন মইনুল আহসান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নমুনা অন্য জায়গায় সংগ্রহ হয়, সেখান থেকে আমরা স্যাম্পল ল্যাবে পাঠাই।”
কিন্তু তাহলে পরীক্ষার সংখ্যা শূন্য থাকছে কেন- জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানার দাবি, কোনো ল্যাবেই নমুনা সংগ্রহ বা পরীক্ষা বন্ধ নেই। বেসরকারি ল্যাবগুলো রোগী না পাওয়ায় পরীক্ষা হচ্ছে না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রাইভেটের ফি দিতে লোকজন ওখানে অতটা যাচ্ছে না। বিদেশে যাওয়ার জন্য যে অনুমতি দেওয়া হল, ওখানেও মানুষ যাচ্ছে না। কিন্তু চাপ তো আমাদের উপরই।”
সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষার ফি ১০০ টাকা। প্রথমে তা ২০০ টাকা হলেও পরে কমানো হয়। আর বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ফি ৩০০ টাকা।
বেসরকারিভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফি সাড়ে তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। আর বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে হলে বাড়তি এক হাজার টাকা দিতে হয়।
তবে বিজিবি হাসপাতালে টানা ১৪ দিন নমুনা পরীক্ষা না হওয়ার বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি সরকারের কোভিড-১৯ টেকনিক্যাল কমিটি ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশনের প্রেসিডেন্ট নাসিমা সুলতানা।
তাহলে ল্যাবগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো তদারকি নেই- এমন কথা স্বীকার করে নেন তিনি।
“বেসরকারিতে আমরা অনুমোদন দিয়েছি, লোকজন টেস্ট করবে। এটা তাদের দায়িত্ব যে তারা কীভাবে কী করবে।”

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে; রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার পরীক্ষার জন্য নেওয়া হচ্ছে নমুনা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদারকির ঘাটতির সমালোচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উপদেষ্টা ডা. বে-নজির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অস্ট্রেলিয়া তো নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। আমরা কেন পারি না? কারণ আমরা সঠিকভাবে পরীক্ষা করছি না; সঠিক ব্যবস্থাপনা হচ্ছে না।”
নমুনা পরীক্ষায় জনসাধারণের অনাগ্রহ থাকার কথা তুলে ধরে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের উপর ‘আস্থার ঘাটতি’ আছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক এই পরিচালক।
তিনি বলেন, “ল্যাবগুলোকে সক্রিয় থাকতে হবে, নিষ্ক্রিয় হলে চলবে না। সক্রিয়ভাবে পরীক্ষা না করলে কোনো জায়গায় রোগী আসবে, কোনো জায়গায় আসবে না।
“যেখানেই একজন রোগী পাওয়া যাবে, তাকে ট্রেসিং এবং টেস্টিংয়ের আওতায় আনতে হবে। তাহলে আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।”
ল্যাবে অনিয়মিত পরীক্ষার বিষয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “একদিনের পরীক্ষা অন্যদিন করালে কিছুটা প্রভাব তো পড়েই। আমরা আইডিয়াল মেথডে সবকিছু করতে পারছি না, অনেক ধরনের ঘাটতি আছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদারকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উনারা তো আমাদের কিছু জানায় না। ওরা তো রেজাল্টই জানায় না। আড়াইটার সময় যে স্বাস্থ্য বুলেটিনটা হত, সেটাই বন্ধ করে দিয়েছে। এতে জনসাধারণ মনে করছে যে, দেশে করোনাভাইরাস মনে হয় নাই।”
আগের মতো প্রচারেরও অভাবে বিষয়টি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, “এসব নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা রয়েছে।”
-
দেশে এল টিকা
-
প্রথম দিন টিকা পাবেন ২০-২৫ জন
-
প্রতিদিন দেওয়া হবে দুই লাখ ডোজ টিকা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
-
টিকার দুই ডোজের ব্যবধান ২৮ দিনের বেশি হলে ‘কার্যকারিতা বাড়ে’
-
টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা কতটুকু?
-
করোনাভাইরাস ‘ধ্বংসকারী’ নাকের স্প্রে তৈরির দাবি বাংলাদেশি গবেষকদের
-
টিকা পেলেও ‘হার্ড ইমিউনিটি’ বহুদূর, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
-
৫০ লাখ টিকার অর্ধেকই বয়ঃবৃদ্ধদের জন্য
সর্বাধিক পঠিত
- বাইডেনের জন্য ট্রাম্পের চিঠি
- মলিন ক্রিকেটের দিনে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক সাকিব
- ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে আগুন
- তামিমকে ১ বছর পর বিচার করতে বললেন সাকিব
- তৃতীয় সারির দলের বিপক্ষে হেরে বিদায় রিয়ালের
- ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলের মালিক এখন শুধুই রোনালদো
- রেকর্ড গড়া অভিষেকেও আকিল হোসেনের আক্ষেপ
- এমন অভিষেক আগে দেখেনি কেউ
- কুষ্টিয়ার এসপিকে হাই কোর্টে তলব, অবমাননার রুল
- আমেরিকাকে ডুবিয়ে বিদায় হলেন ট্রাম্প