নিউমোনিয়ায় বছরে মারা যাচ্ছে ‘২৪ হাজার’ শিশু

বাংলাদেশে প্রতিবছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৪ হাজার ৩০০টি শিশুর মৃত্যু ঘটছে বলে আইসিডিডিআর,বির মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2020, 07:19 PM
Updated : 11 Nov 2020, 07:19 PM

বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে বুধবার মহাখালীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই তথ্য তুলে ধরেন।

ইউএসএইডের সহায়তায় এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে আইসিডিডিআর,বির রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স (আরডিএম) প্রকল্প এবং ডেটা ফর ইম্প্যাক্ট (ডিফরআই)। এতে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বিসহ ১৪ জন সাংবাদিক অংশ নেন।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭- এর বরাত দিয়ে নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরেন এহসানুর রহমান।

তিনি বলেন, ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেওয়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৪২ শতাংশকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ শিশু অ্যান্টিবায়োটিক পেয়ে থাকে।

বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুর ৪৫ শতাংশ ঘটে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

সভায় মূল প্রবন্ধে এহসানুর রহমান বলেন, ২০১১ সালে দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি এক হাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে ১১ দশমিক ৭টি শিশু মারা যেত নিউমোনিয়ায়। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৮ দশমিক ১। বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি এক হাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা তিনটিতে নামিয়ে আনতে হবে।

দেশে নিউমোনিয়ায় মারা যাওয়া শিশুর ৫২ শতাংশই বাড়িতে মারা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা কোনোও ধরনের চিকিৎসা পায় না। অপরদিকে ৩ শতাংশ শিশু চিকিৎসা পেয়েও বাড়িতে মারা যাচ্ছে। আবার হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার পরেও নিউমোনিয়ায় মারা যাচ্ছে ৪৫ শতাংশ শিশু।”

আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর শিশুরা হাইপোক্সেমিয়ায় (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) বেশি মারা যায়। কোভিডের সময় এটা আরও বেশি হয়। যেসব শিশুর অক্সিজেনের স্বল্পতা থাকে, তাদের নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার বেশি। তাই প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পালস অক্সিমিটার থাকা জরুরি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মাত্র ৫ ভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিউমোনিয়ার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সক্ষমতা আছে। ৫০ ভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর নেই। এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেনের অন্যান্য সোর্স অনুপস্থিত। পালস অক্সিমিটার রয়েছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জেলা হাসপাতালে।”

বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় মারা যাওয়ার হার ১৮ শতাংশ বলে জানান অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন।

তিনি বলেন, মৃত্যুহার কমাতে শিশুকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়া, ৬ মাসের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হবে। শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে নিতে হবে হাসপাতালে।

চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সমীর সাহা বলেন, নিউমোনিয়া কোন জীবাণুর কারণে হচ্ছে সেটির ৫০ শতাংশই এখনও অজানা।

“সেটি কি ভাইরাসের মাধ্যমে হচ্ছে নাকি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে, তা জানা নেই। এটি জানার উপায় আছে, কিন্তু ইচ্ছে নেই। নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে হলে এই কারণ জানার উদ্যোগ নিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ইউএসএইড বাংলাদেশের মনিটরিং, ইভালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কান্তা জামিল। এ সময় আরডিএম অ্যাক্টিভিটির চিফ অব পার্টি ও আইসিডিডিআর,বির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর শামস এল আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।