জেএমআই হাসপাতাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও সিএমএসডির ছয় কর্মকর্তাকে আসামি করে মঙ্গলবার দুদকের করা মামলায় এই অভিযোগ করা হয়।
দুদকের উপপরিচালক নুরুল হুদার করা এই মামলায় রাজ্জাককে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে হেফাজতেও নিয়েছে সংস্থাটি।
দেশে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত মার্চে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য সিএমএসডি ৫০ লাখ মাস্কের কার্যাদেশ দিয়েছিল জেএমআইকে।
তাদের সরবরাহ করা মাস্ক নকল বলে চিকিৎসকরা অভিযোগ করার পর তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। তার আগে ২০ হাজার ৬১০টি নকল এন-৯৫ মাস্ক সরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্যখাতের ১০ প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হয়েছিল।
মহামারীর শুরুতে অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর আক্রান্ত হওয়ার জন্য নকল মাস্ক ও সুরক্ষা সামগ্রীকে দায়ী করে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো।
এরপর মাস্ক ও পিপিইসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক। গত ১৫ জুন জয়নুল আবেদীন শিবলীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। তিন মাস অনুসন্ধান শেষে মামলাটি দায়ের করা হল।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সিএমএসডির সাবেক উপ-পরিচালক ডা. জাকির হোসেন, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. শাহজাহান, ডেস্ক অফিসার জিয়াউল হক ও সাব্বির আহমেদ, স্টোর অফিসার কবির আহমেদ ও জ্যেষ্ঠ স্টোর কিপার মো. ইউসুফ ফকির।
এমএসডির তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, গত ২৩ মার্চ সিএমএসডির তৎকালীন পরিচালক শহীদুল্লাহর স্বাক্ষরে জেএমআই ৫০ লাখ পিস ‘ফেস মাস্ক’ সরবরাহের আদেশ পায়।
এরপর ২৭ ও ৩১ মার্চ প্রতিষ্ঠানটি ২০ হাজার ৬১০টি মাস্ক সিএমএসডিকে সরবরাহ করে। এসব মাস্কের বড় বড় কার্টন খুলে ছোট ছোট প্যাকেটের গায়ে এন-৯৫ লেখা মাস্ক থাকলেও মাস্কের উপর কোম্পানি, মাস্কের নাম বা অন্য কোনো কিছু লেখা ছিল না।
এসব মাস্ক সিএমএসডির পক্ষে জ্যেষ্ঠ স্টোর কিপার ইউসুফ ফকির চালান দেখে গ্রহণ করেন। ওই চালানে স্টোর অফিসার কবির আহমেদ, ডেস্ক অফিসার ডা. সাব্বির আহমেদ, সহকারী পরিচালক ডা. শাহজাহান সরকার, উপ-পরিচালক জাকির হোসেন এবং তৎকালীন পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষর করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, “সিএমএসডির নিয়ম হলো সার্ভে কমিটির মাধ্যমে যাচাই করে পণ্য গ্রহণ করা, কিন্তু এই ধরনের কমিটির মাধ্যমে যাচাই না করেই তারা পরস্পর যোগসাজসে নিজেরা লাভবান হয়ে নকল এন-৯৫ মাস্ক গ্রহণ করেন।
“এসব নকল এন-৯৫ মাস্ক ১০টি প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্যদের মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেন।”
এসব অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন- ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলার বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেন, “জেএমআই নকল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেছে। এতে সিএমএসডির কিছু কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এসব নকল মাস্ক চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করে তাদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়।”
এই ঘটনার সাথে যাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদেরকে আসামি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মামলার তদন্তে যদি আর কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তারা বা তাদেরকেও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
অভিযোগের মুখে জেএমই বলেছিল, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে সরবরাহ করা ২০ হাজার ৬০০টি মাস্ক এন-৯৫ না হলেও ‘ভুল করে’ তা সরবরাহ করা হয়েছিল।