বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে একথা বলেছে সংগঠনটি। ‘হৃদয় দিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মঙ্গলবার বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত হবে।
প্রজ্ঞার বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে (মোট মৃত্যুর ৩১%) এবং কেবল ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যার ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভেজিটেবল অয়েল বা উদ্ভিজ্জ তেল (পাম, সয়াবিন ইত্যাদি) যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ‘পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেশন’ করা হলে তেল তরল অবস্থা থেকে জমে যায়। এই প্রক্রিয়া ছাড়াও ভাজা পোড়া খাদ্যে একই ভোজ্য তেল উচ্চ তাপমাত্রায় বার বার ব্যবহারের কারণেও খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট সৃষ্টি হয়।
তবে পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস। এই পিএইচও বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে অধিক পরিচিত। ডব্লিওএইচও’র পরামর্শ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম, অর্থাৎ দৈনিক ২০০০ ক্যালোরির ডায়েটে তা হতে হবে ২ দশমিক ২ গ্রামের চেয়েও কম।
উচ্চমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) গ্রহণ হার্ট অ্যাটাকসহ হৃদরোগজনিত মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি করে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ডব্লিওএইচও’র ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ করার পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিওএইচও। একই সাথে হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লাটভিয়া, স্লোভেনিয়া, ভারত, মেক্সিকো, নেপাল, পাকিস্তান, ইরান, কোরিয়া, মিশর, আজারবাইজান, ভুটান, ইকুয়েডরের সাথে বাংলাদেশও নাম রয়েছে ডব্লিওএইচও’র তালিকায়।
প্রজ্ঞার বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি এক গবেষণায় ঢাকার পিএইচও নমুনার ৯২ শতাংশে ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২ শতাংশের চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা ডব্লিউএইচও’র সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি। অপর একটি গবেষণায় ঢাকার স্থানীয় বাজার থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে সংগৃহীত ১২ ধরনের বেকারি বিস্কুটের নমুনায় ৫ শতাংশ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ করে আইন প্রণয়ন এবং কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, “এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আইন বা নীতি নেই। তবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি করিগরি কমিটি গঠন করেছে।”