বেক্সিমকো বলছে, সমস্যাটি তাদের ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে হয়নি। ওষুধের কাঁচামাল বা এটার প্রস্তুতের প্রক্রিয়ায় সমস্যা থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আর মেটফরমিনের কাঁচামাল তারা বিভিন্ন উৎপাদকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে। বিষয়টি এখন কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।
ট্যাবলেট দুটির যে দুটি লট বাজার থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোতে এন-নাইট্রোসোডিমিথাইলাইমাইন (এনডিএমএ) নামে একটি উপাদানের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, যাতে মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ওষুধ প্রশাসন-এফডিএ জানিয়েছে।
গত বছর জুনে তৈরি বেক্সিমকোর ট্যাবলেট দুটির দুটি লট ১৯ অগাস্ট বেশোর কোম্পানি বাজার থেকে তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় বলে এফডিএ জানিয়েছে।
এফডিএর এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, ওই দুটি লটে এনডিএমএর উপস্থিতি দৈনিক গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি থাকায় বেশোর স্বেচ্ছায় ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
তবে চিকিৎসক বা ফার্মাসিস্ট বিকল্প কোনো ওষুধ বা চিকিৎসার পরামর্শ না দেওয়া পর্যন্ত রোগীদের মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ইআর ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছে এফডিএ।
সেসঙ্গে ক্লিনিক্যালি উপযুক্ত হলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদেরকেও মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ইআর ওষুধ ব্যবহারে রোগীদের পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রাখতে বলেছে।
পরীক্ষাগারে পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, এনডিএমএ মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী সম্ভাব্য উপাদান হিসেবে শ্রেণিভুক্ত। পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে সুপরিচিত এনডিএমএ পানি ও মাংসসহ খাদ্যদ্রব্য, দুগ্ধজাত পণ্য ও শাক-সবজির মধ্যে পাওয়া যায়।
মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ইআর ৭৫০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেটের ১৮৬৫৭ নম্বর লট পরীক্ষা করে এনডিএমএর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানিয়ে বেশোর ফার্মাসিটিক্যালসকে তা বাজার থেকে তুলে নিতে সুপারিশ করে এফডিএ।
বেশোর এই লটটি বাজার থেকে তুলে নিতে রাজি হওয়ার পাশাপাশি বাড়তি সতর্কতা হিসেবে একই কাঁচামাল দিয়ে তৈরি মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড ইআর ট্যাবলেটের মোট আটটি লটের নমুনা পরীক্ষা করে উল্লিখিত লট এবং ৫০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেটের ১৮৬৪১ এত নম্বর লটে এনডিএমএর গ্রহণযোগ্য মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পেয়ে দুটি লট বাজার থেকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে এই ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কোনো খবর বেশোর বা বেক্সিমকো পায়নি বলে সতর্কবার্তায় বলা হয়।
২০১৫ সালের জুন মাসে প্রথম বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির অনুমোদন পায় এবং কোম্পানির তৃতীয় ওষুধ হিসেবে ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড-ইআর ট্যাবলেট রপ্তানির অনুমোদন পায়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা এক ইমেইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি কোম্পানির তৈরি মেটফরমিনে এনডিএমএ পেয়ে গত জুনে এফডিএ সেগুলো বাজার তুলে নেওয়ার সুপারিশ করার পর গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়াসহ নতুন সব ওষুধে এনডিএমএর মাত্রা পরীক্ষা শুরু করে বেক্সিমকো।
ওষুধে এনডিএমএর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতির বিষয়ে রেজা বলেন, “আমাদের বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন, সমস্যাটা ওষুধ প্রস্তুতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং ওষুধের কাঁচামাল বা এটার তৈরিতেই সমস্যা থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আমরা নিজেরা মেটফরমিনের কাঁচামাল তৈরি করি না, বিভিন্ন উৎপাদকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করি।
“জুনের পর থেকে প্রতিটি লটের কাঁচামাল কেনার সময় তাতে কি মাত্রার এনডিএমএ আছে তা ঘোষণা করার জন্য আমার প্রস্তুতকারকদের কাছে আহ্বান জানিয়েছি। কেনার পর প্রতি লটের কাঁচামালে এনডিএমর মাত্রা নিজের ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখছি এবং ওষুধ চূড়ান্তভাবে বাজারে ছাড়ার আগেও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।“
এনডিএমএ টেস্ট এফডিএ বাধ্যতামূলক না করলেও বেক্সিমকো ভোক্তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্ব-উদ্যোগে সেটা করছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আইয়ুব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড এক্সটেন্ডেড রিলিজে (ইআর) এনডিএমর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সতর্ক।
“এজন্য ১৯টি কোম্পানি থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছে। সেটা সিঙ্গাপুরের একটি গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। সিঙ্গাপুরের ওই ল্যাব আমাদের অ্যাকসেপ্টেন্স দিলে নমুনা সেখানে পাঠাব।“
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ওবায়দুর মাসুম ও নিজস্ব প্রতিবেদক ফারহান ফেরদৌস।)