কোভিড-১৯: কীভাবে টিকা পাবে বাংলাদেশ?

পৃথিবীর মানুষের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী? তালিকা করলে সবার উপরে আসবে করোনাভাইরাসের টিকার কথা, যার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের অনেক কিছু।   

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2020, 05:24 PM
Updated : 4 Sept 2020, 05:24 PM

বিভিন্ন দেশ এবং খ্যাত-অখ্যাত নানা কোম্পানি এই টিকা তৈরির জন্য নানা ধাপের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সম্ভাব্য যেসব টিকা আশা জাগাচ্ছে, সেগুলো পাওয়ার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখছে ধনী দেশগুলো।

টিকা তৈরি হলে তা পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা শুরু করেছে বাংলাদেশও। ইতোমধ্যে চীনা একটি কোম্পানিকে বাংলাদেশে তাদের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ভারতে টিকা উৎপাদন শুরু হলে তা আনার জন্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশের একটি কোম্পানি। টিকার জন্য রাশিয়ায় চিঠি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।          

আন্তর্জাতিক জোট ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনসের (গ্যাভি) এর অধীনে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটির (কোভ্যাক্স) মাধ্যমে টিকা পাওয়ার জন্যও ইতোমধ্যে আবেদন করেছে বাংলাদেশ।

তবে কবে নাগাদ করোনাভাইরাসের অনুমোদিত টিকা সাধারণ মানুষের নাগালে আসতে পারে- সেই প্রশ্নের নিশ্চিত কোনো উত্তর কারও কাছে নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোথাও এখন পর্যন্ত সফলভাবে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, এটা কেউ বলতে পারে না। সেকেন্ড ট্রায়াল হয়েছে, কেউ কেউ থার্ড ট্রায়াল করছে। আমাদের অবস্থান হচ্ছে ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো বাংলাদেশ করছে এবং কোনো দেশের চেয়ে পিছিয়ে নেই।”

করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির চেষ্টায় বিশ্বে এখন প্রায় দুইশ গবেষণা চলছে। এর মধ্যে ছয়টি সম্ভাব্য টিকা পৌঁছেছে পরীক্ষার একেবারে শেষ ধাপে।

টিকা কত দূর

গত বছরের শেষে চীন থেকে ছড়াতে শুরু করে পুরো বিশ্ব দখল করে নেওয়া নতুন করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে আড়াই কোটির বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে, মৃত্যু ঘটিয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষের।

এ ভাইরাসের টিকা তৈরির চেষ্টায় বিশ্বে এখন প্রায় দুইশ গবেষণা চলছে। এর মধ্যে আধা ডজন সম্ভাব্য টিকা পৌঁছেছে পরীক্ষার একেবারে শেষ পর্যায়ে।

এর মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-আস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, ফাইজার, ক্যানসিনো বায়োলজিক্যাল, সিনোভ্যাক বায়োটেক ও সিনোফার্ম তাদের তৈরি করা সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালাচ্ছে বিশ্বের কয়েকটি দেশে।

আর রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউট তাদের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ না করেই সরকারের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে।

কোনো টিকা চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার আগে বিপুল সংখ্যক রোগীর ওপর এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হয়, যাকে বলে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় সফল প্রমাণিত হলে ট্রায়ালে অংশ নেওয়া দেশগুলো ইমার্জেন্সি অথরাইজেশন দেবে। সবশেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়টি আসবে। 

করোনাভাইরাস সঙ্কটে বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ সহায়তা দিয়ে আসছেন কেমব্রিজের পিএইচডি ডিগ্রিধারী ডা. মুশতাক হোসেন, যিনি একসময় আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন।

তার পরামর্শ, টিকা তৈরি হওয়ার পর তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাওয়ার জন্য সরকারকে সব বিকল্পই হাতে রাখতে হবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নিলে বিষয়টিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া উচিত। তাতে দেশের ‘বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ’ বাড়বে।

“দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিভিন্ন দেশের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অংশ নেওয়া দরকার। এতে প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে। যত বেশি ট্রায়াল করব, তত বেশি প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে।

“কারণ কোন ভ্যাকসিন কার্যকর হবে, তা আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। বেশকিছু ভ্যাকসিন সফল হবে না। সফল ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করলে আমাদের জানা থাকবে, দেরি হবে না।”

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ছাড়াই বড় পরিসরে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন শুরু করেছে রাশিয়া।

কী করছে বাংলাদেশ?

করোনাভাইরাসের কার্যকর টিকা পাওয়া গেলে তা যাতে সারা বিশ্বের মানুষ পায়, তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি।

এ দুই বিশ্ব সংস্থার আয়োজনে গত ৪ জুন গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট হয়, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।

ওই সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়, যাকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে কোভ্যাক্স।

গত ৩০ জুলাই গ্যাভির বোর্ড সভায় এই কোভ্যাক্সের অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্ট (এএমসি) প্রকল্পের আওতায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও সেই তালিকায় রাখা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিলে এসব দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত ২০ শতাংশের জন্য সেই টিকা সরবরাহের প্রাথমিক লক্ষ্য ঠিক করেছে গ্যাভি। আর সেজন্য সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ, যদিও পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে কার্যকর ও নিরাপদ টিকার অনুমোদনপ্রাপ্তি, উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, কোভ্যাক্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব দেশের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারের বেশি সেসব দেশকে টিকা কিনে নিতে হবে। চার হাজার ডলারের নিচে আয়ের দেশকে শুরুতে বিনামূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকা দেবে গ্যাভি।

সে অনুযায়ী বাংলাদেশ গত ৯ জুলাই কোভ্যাক্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্যাভির কাছে আবেদন পাঠিয়েছে। সে আবেদন গ্যাভি গ্রহণ করেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো টিকার অনুমোদন দিলে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হারে বাংলাদেশ গ্যাভির কাছ থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা পেতে পারে। আর টিকা পেলে শুরুতে তা দেওয়া হবে চিকিৎসকসহ করোনভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ‘সম্মুখসারির যোদ্ধাদের’।

তবে পুরো টিকাই বাংলাদেশকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে, নাকি সেজন্য আংশিক দাম দিতে হবে- সে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে সেপ্টেম্বরে গ্যাভির বোর্ড মিটিংয়ের পর।

বর্তমানে বাংলাদেশ গ্যাভির কাছ থেকে বিভিন্ন রোগের যে টিকা নিচ্ছে তার ১০ শতাংশ মূল্য সরকারকে পরিশোধ করতে হয়, বাকি ৯০ শতাংশ দেয় গ্যাভি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্যাভির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়েছে রেখেছি। তবে টিকা কবে পাওয়া যাবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। আমরা সব দিকেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো কার্যকর আর নিরাপদ টিকা যদি এখনও তৈরি হয়, তাহলেও গ্যাভির প্রতিশ্রুত টিকা বাংলাদেশের হাতে আসতে আগামী বছরের জুন-জুলাই চলে আসবে। তার আগেই কোনো উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করা যায় কিনা, সে বিকল্পও খোলা রাখতে চায় বাংলাদেশ।

“আমার সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করছি না। আমরা এর আগেই টিকা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। নির্দিষ্ট কোনো দেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি না। যেখান থেকে দ্রুত, কার্যকর টিকা পাওয়া যাবে সেখান থেকেই সংগ্রহ করা হবে।”

সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেডের তৈরি করা সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশেও হবে

চীনা টিকার ট্রায়াল

চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড তাদের তৈরি করা টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশে করার জন্য গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) অনুমোদন নেয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের বিলম্বের কারণে বিষয়টি ঝুলে থাকে প্রায় দেড় মাস।

শেষ পর্যন্ত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমতি মিলেছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ২৭ অগাস্ট সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ট্রায়াল করতে দেব। যারা স্বেচ্ছায় আসবে, তাদের ওপরই শুধু ট্রায়াল হবে। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত এবং সিনোভ্যাক কোম্পানিকেও আমরা এ কথা জানিয়ে দিয়েছি।”

ঘোষণা অনুযায়ী, এই টিকার বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কাজটি করবে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর,বি। শুরুতে দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথা রয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালানো হচ্ছে, সেভাবেই বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে।

এ ক্ষেত্রে স্বীকৃত পদ্ধতি হল, ট্রায়ালে একটি দলকে আলাদা করে আসল টিকা দিতে হবে। আরেকটি দলকে দেওয়া হবে ‘প্ল্যাসিবো’, অর্থাৎ টিকার মত শরীরে দেওয়া হলেও টিকার কোনো উপাদান সেখানে থাকবে না।

ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের কেউ জানবেন না, তিনি আসল টিকা পেয়েছেন, নাকি ‘প্ল্যাসিবো’। দুটি দলকেই ছয় মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন। একটি বিশেষজ্ঞ দল নিয়মিত টিকার প্রভাব বিশ্লেষণ করবেন।

সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে- ওই টিকা আসলে কতটা কার্যকর। আর এই পুরো ট্রায়াল হতে হবে অংশগ্রহণকারী সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করে। 

এ বছরের মধ্যেই ভারতীয়রা অক্সফোর্ডের গবেষকদের উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ টিকা পাবেন বলে আশা করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া।

ভারতের টিকা কীভাবে আসবে

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতে। আর কোভিশিল্ড নামের ওই টিকা পরীক্ষা ও উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটি অফ ইন্ডিয়া- এসআইআই।

এই টিকার ১০০ কোটির বেশি ডোজ উৎপাদন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহের জন্য এসআইআই ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার এবং গেটস ফাউন্ডেশন ও গ্যাভির সঙ্গে আংশীদারিত্বে পৌঁছেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এলে ভারতে তৈরি টিকা নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়। শ্রিংলা বলেন, ভারতে ভ্যাকসিন তৈরি হলে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে।

আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রায়ালসহ কোভিড-১৯ টিকা তৈরিতে ভারতকে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। টিকা প্রস্তুত হলে সাশ্রয়ীমূল্যে শুরুতেই পেতে চায় বাংলাদেশ।

এর দশ দিনের মাথায় গত ২৮ অগাস্ট দেশের ওষুধ খাতের শীর্ষ এই কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড জানায়, ভারতে টিকা তৈরি হলে তা বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে তারা।

এই চুক্তির আওতায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস হবে বাংলাদেশে এসআইইর ওই ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’। কত পরিমাণ টিকা আনা যাবে, দাম কত পড়বে সেসব বিষয় পরে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

সেদিন বেক্সিমকোর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের ‘প্রয়োজন মেটানোর’ বিষয়টিও নিশ্চিত করবে তারা।

“বাংলাদেশ সরকার ও এসআইআই যে দামে সম্মত হবে, সেই দামে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সরবরাহের জন্য ভ্যাকসিন সংরক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হবে সরকারকে। এছাড়া বাংলাদেশের বেসরকারি বাজারের জন্যও ভ্যাকসিনের সরবরাহ নিশ্চিত করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।”

দুদিন পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, “ইতোমধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আমরা পেয়েছি। সেটা ভারতের সেরাম কোম্পানি রেডি করছে এবং বেক্সিমকো এই সেরামের সাথে মিলে যৌথভাবে বাংলাদেশে দেওয়ার ব্যবস্থা নেবে। সরকারিভাবেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”

এছাড়া রাশিয়ার তৈরি ‘স্পুৎনিক’ টিকা পাওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলেও সেদিন জানান মন্ত্রী। 

তবে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ছাড়াই উৎপাদনে যাওয়ায় এই টিকা মানুষের জন্য কতটা নিরাপদ হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বিশেষজ্ঞের মধ্যে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেটা আমরা তাড়াতাড়ি পাব, এবং বেশি কার্যকর হবে, সেটাই আমাদের প্রায়োরিটি হবে। একেবারেই তো সব ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না, আমাদের দেশের মানুষের স্বার্থ সবার আগে। মানুষ যেটায় সুস্থ থাকবে, সেদিকে আমরা যাব।”