কোভিড-১৯: শিশুদের ঝুঁকির কথা জানাল পরামর্শক কমিটি

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিপক্ষে মত জানিয়ে এর সপক্ষে শিশুদের একটি ঝুঁকির কথা তুলে ধরেছে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2020, 05:49 PM
Updated : 27 August 2020, 05:59 PM

বৃহস্পতিবার কমিটির অষ্টাদশ অনলাইন সভায় বিশেষজ্ঞরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন না খোলার পরামর্শ দিয়েছেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত শিশুদের মাঝে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেশন সিনড্রম নামক জটিলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা আশঙ্কাজনক এবং তা শিশু মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“দেখা গেছে যে, মৃদু সংক্রমণের কারণেও দেহের বিভিন্ন অঙ্গ দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য।”

“শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটি এ সিদ্ধান্তে আসে যে, এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ও পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই,“ বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় যোগ দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলছে, শিশুদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কম বলে মনে হলেও পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, তা একবারে কম নয়।

“আইইডিসিআর এর বয়সভিত্তিক তথ্য বিভাজনে দেখা যায় আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৭-৮ ভাগ স্কুলগামী বয়সের। এছাড়াও আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বি’র যৌথভাবে পরিচালিত জরিপের দেখা যায় শতকরা ৪-৫ ভাগ শিশু সংক্রমিত হয়েছে।”

দেশে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা এখন ৩ লাখের বেশি, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার নতুন সিদ্ধান্তে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

মহামারীর কারণে বছর শেষের প্রাথমিক সমাপনী এবং জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঝুলে থাকা এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে বিকল্প মূল্যায়নের পদ্ধতি বের করার কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মহামারীকালে দেশে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু হলেও অনেক শিক্ষার্থী এর আওতার বাইরে রয়েছে। ইউনিসেফ বৃহস্পতিবারই বলেছে, সামর্থ্যের অভাবে দূরশিক্ষণে অংশ নিতে পারছে না বিশ্বের স্কুলপড়ুয়া এক-তৃতীয়াংশ শিশুও।

এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে কারিগরি কমিটি বলছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা একটি এক মাসব্যাপি দীর্ঘ কার্যক্রম, যা দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে জড়িত করে। এর ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

“পরবর্তীতে পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।”

কোভিড-১৯ টিকার (ভ্যাকসিন) বিষয়ে কারিগরি কমিটি বলছে, প্রথমেই হয়ত দেশের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে, তাই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠি বাছাই করে পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণের বিষয়ে ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল এডভাইজারি গ্রুপ (নাইট্যাগ)-এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণের বিষয়ে গাইডলাইন প্রস্তুতের প্রস্তাব করা হয় কারিগরি কমিটির পক্ষ থেকে।

কোভিড-১৯ শনাক্তে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার বিষয়ে জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্যরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে যেসব জেলায় কোভিড-১৯ পিসিআর টেস্টের সুবিধা নেই এবং গত দু’সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বেশি সে সব জেলায় অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করা যায়। 

কমিটি বলেছে, “ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে কী কী অ্যান্টিজেন পাওয়া যায় এবং কোন কোন কোম্পানির কাছে তা পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে পর্যালোচনা চলছে। এছাড়াও যেখানে চিকিৎসা বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন সেইসব হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্ট করা যেতে পারে।”

স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে একটি চিঠি দিয়েছে।  

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনিয়ে সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি বলে হতাশা প্রকাশ করেছে জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটি।

কমিটি বলেছে, “স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি মনে করে। স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা ও ডিউটি রোস্টার যেন স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পরামর্শ দেওয়া হয়।”