আগে মহামারী সামাল, পরে দুর্নীতি দমন: স্বাস্থ্যের ডিজি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে নানা কেলেঙ্কারিতে আলোচিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্বে আসা ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, এই মুহূর্তে মানুষ বাঁচানোর পদক্ষেপকেই অগ্রাধিকারে রাখছেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2020, 05:18 PM
Updated : 27 July 2020, 05:33 PM

দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় দিন সোমবার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, “আগে তো বাঁচি। এরপর দুর্নীতিসহ সব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

“দেশ এখন করোনার দুর্যোগ ও বন্যা কবলিত। এসব মোকাবিলা করাই আগামী সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একশ ভাগ না হলেও নিরানব্বই ভাগ সমাধান করতে পারব।”

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ও অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার দুদিন পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ডা. খুরশীদ আলম বলেছিলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির দায় সবার।

এ বক্তব্য কেন দিলেন জানতে চাইলে সার্জারির এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, তিনি বলতে চেয়েছেন ব্যক্তি সৎ না হলে আইন-কানুন দিয়ে ‘কিছু পারা যাবে না’।

শনিবার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডা. খুরশীদ আলম।

এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, “আমি চিকিৎসক, আপনি বিপদে পড়ে আমার কাছে এলেন। আমি যদি তার ফায়দা নেই সেটা তো বিপজ্জনক।”

মহামারী মোকাবেলায় কোনো নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না কি আগের পরিকল্পনায় সব চলবে-এমন প্রশ্নে ডা. খুরশীদ আলম বলেন, “করোনাভাইরাস নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব না। শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থাও বদলানোর কাজ হচ্ছে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি দরকার হয় বদল আসবে, সেটা আপনাদের জানানো হবে।”

করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল নিয়ে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মেয়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

“এটা লুকানোর কিছু নাই, যদি আমাদের ভুল হয়ে থাকে, সেটা বলব। আর যদি এটা মেশিনারিজ ভুল হয়ে থাকে সেটাও বলব। আর কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে জড়িত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্য, অবশ্যই সেটা নিশ্চয়ই সুষ্ঠু সমাধান হবে।”

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিনজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে সে প্রশ্নের উত্তর দিতে ডা. নাসিমা সুলতানাকে আহ্বান জানান মহাপরিচালক।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, “বাংলাদেশ এখন সংক্রমণের চূড়ায় নেই। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এখন কমতির দিকে। আইইডিসিআরের তথ্যও তাই বলছে।”

স্বাস্থ্যখাতে আস্থা ফেরাতে একসঙ্গে কাজ করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, “আপনারা তো দেশের ভালো চান। আমরাও দেশের ভালো চাই। দুই ‘ভালো চাই’ এর দল যদি একসাথে কাজ করি তাহলে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে যাওয়া যাবে।”

ডা. খুরশীদ আলম বলেন, মহাপরিচালক হিসেবে তিনি নতুন বিধায় না জেনে ভুল তথ্য দিলে সমালোচনা হবে বলে এর আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি।

মহামারীর মধ্যে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পর সমালোচনার মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদ ছাড়তে বাধ্য হন অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তার স্থলাভিষিক্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খুরশীদ আলম রোববারই এই দায়িত্ব নিয়েছেন।