দেশে এক মাসে আরও এক লাখ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত

বাংলাদেশে বিধিনিষেধ শিথিলের পর রোগীর সংখ্যা বাড়ার গতিতে এক মাসেই আরও এক লাখ ব্যক্তির দেহে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2020, 08:40 AM
Updated : 18 July 2020, 10:56 AM

১৮ জুলাই শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৭০৯ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার তথ্য জানিয়েছে। তা নিয়ে দেশে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৬৬।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩৪ জন। তাদের নিয়ে করোনাভাইরাসে ‍মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৮১।

আর আইইডিসিআরের ‘অনুমিত’ হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৩৭৩ জন রোগী সেরে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৮ জন হয়েছে।

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর এসেছিল।

আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছিল তিন মাস পর গত ১৮ জুন; তার ঠিক এক মাস পর ১৮ জুলাই সংখ্যাটি ২ লাখ ছাড়াল।

রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি

১-১০০

১০০-১০০০

১০০০-১০০০০

১০০০০-৫০০০০

৫০০০০-১০০০০০

১০০০০০-২০০০০০

সময় লাগল

২৮ দিন

৮ দিন

১৮ দিন

১৮ দিন

১৬ দিন

৩০ দিন

দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সংখ্যাটি ১০০ পেরুতে যেখানে ২৮ দিন লেগেছিল, সেখানে শেষ এক লাখ রোগী বাড়তে সময় লাগল মাত্র ৩০ দিন।

বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা শনিবার এক কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যাও ৬ লাখ পেরিয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, গত ১০০ ঘণ্টায় এই প্রথম বিশ্বে ১০ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, দেশটিতে ৩৬ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। তৃতীয় স্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত, সেখানে রোগীর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের টালিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে সপ্তদশ; রোগীর সংখ্যায় জার্মানিকে ছাড়িয়ে এখন ফ্রান্সের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে শনাক্ত রোগী বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ; এই হার ভারতে ২ দশমিক ৬ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৪ শতাংশের কাছাকাছি। বেলজিয়াম ও যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশের উপরে।

তবে নমুনা পরীক্ষায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে দেড় লাখকে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে, বাংলাদেশে সেখানে প্রতি ১০ লাখে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬ হাজার জনের। এই হার ভারতে প্রায় ১০ হাজার, পাকিস্তানে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শনিবারের বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা দেশে নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তিনি লক্ষণ দেখা দিলেই নমুনা দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

“জেলা-উপজেলা পর্যায়ে, প্রত্যন্ত এলাকায় নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা আছে। আপনাদের যারা নমুনা দেওয়ার দরকার মনে করবেন সেসব জায়গায় গিয়ে নমুনা জমা দিবেন। যে কোনো ধরনের লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলেই আপনারা নমুনা দিতে আসবেন।”

গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ হাজার ৯২৩টি নমুনা পরীক্ষার কথা জানানো হয় বুলেটিনে। তা নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৪টি।

ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ২৯ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। এদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩৫ জনের এবং বাড়িতে থাকা অবস্থায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মৃতদের মধ্যে ১৪ জন ঢাকা বিভাগের, ৩ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৫ জন রাজশাহী বিভাগের, ১ জন বরিশাল বিভাগের, ৬ জন খুলনা বিভাগের, ১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের এবং ৪ জন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

এই ৩৪ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স ৮০ বছরের বেশি। এছাড়া ১০ জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ১৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।

নতুন করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটেছে রোজার ঈদের পর গত জুন মাসে। ১ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৭২০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, এ সময় মারা গেছে ১ হাজার ২১৬ জন।

রোজার ঈদে মানুষের যাতায়াতে ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে কোরবানির ঈদে সতর্ক থাকার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

পুরনো খবর