তাদের মতো মেয়েদের ‘স্বামী জংলি হওয়া উচিত এবং একেবারে রেপ করে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে’ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী।
বিষয়টি নিয়ে তার এক ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
তবে কাজী শামসুন নাহার নামে স্কয়ার হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ওই কনসালটেন্ট অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও তাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য ‘অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফসারা তাসনিম বুশরা রোববার রাতে এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, সম্প্রতি নিজের ‘ভ্যাজাইনিসমাস’ সমস্যা বুঝতে পেরে মায়ের সঙ্গে আলোচনার পর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে শনিবার কাজী শামসুন নাহারের কাছে যান তিনি। এ সময় তার মাও সঙ্গে ছিলেন। শারীরিক পরীক্ষার এক পর্যায়ে ওই মন্তব্য করেন চিকিৎসক।
“আমি কাঁদতে কাঁদতে চেম্বার থেকে বের হয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ মুহূর্ত ছিল সেটি। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এ ধরনের বাজে কথা শোনার জন্য কাউকে আমি টাকা দিয়েছি। আমার রাগ হচ্ছিল যে, কেন এর প্রতিবাদ করলাম না,” ঘটনার বিবরণ দিয়ে ফেইসবুকে লিখেছেন তিনি।
ওই তরুণী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই চিকিৎসক পাঁচ থেকে ছয় বার জানতে চান, তার বিয়ে হয়েছে কি না বা বিয়ে ঠিক হয়েছে কি না।
“তিনি আমাকে বলেন, বিয়ে না হলে এ বিষয়ে এত কনসার্নড কেন? সময়ের আগে কোনো কিছু জানা উচিত না। আপনি তো ইন্টারকোর্স করছেন না, তাহলে জানতে চাচ্ছেন কেন? এটা আধুনিকতার লক্ষণ না।”
করোনাভাইরাসে মারা গেলে এ ধরনের ‘হাস্যকর ঘটনা’ দেখতে পেতেন না বলেও ওই চিকিৎসক রসিকতা করেছিলেন বলে বুশরা জানান।
তিনি বলেন, ডা. শামসুন নাহার তার যৌনাঙ্গ পরীক্ষার সময় তিনি ব্যথা পাচ্ছিলেন বলে তার প্রকাশ ঘটানোয় ওই চিকিৎসক ক্ষেপে গিয়েছিলেন।
“এরপর চেম্বার ত্যাগ করার আগে আমাকে উদ্দেশ করে ডাক্তার বলেন, ‘এসব মেয়েদের হাজবেন্ড একটু জংলি টাইপের হওয়া উচিত, যাতে তারা একেবারে রেপ করে ফেলে। কারণ এ মেয়েরা পারমিশন দিতে চায় না, যেহেতু সেক্সের সময় ওদের ব্যথা লাগে। তাই একেবারে রেপ করে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এই ঘটনা প্রকাশ করার কারণ ব্যাখ্যায় বুশরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের ঘটনা অনেক মেয়ের সাথে ঘটে থাকে। কিন্তু কেউই মুখ খোলেন না। আর একজন নারী ডাক্তার এই ধরনের কথা বলছেন, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না।
“আমি চাই না অন্য কোনো মেয়ে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হোক। আমি চাই, এই ডাক্তারকে সবাই বয়কট করুক।”
২১ বছরের ওই তরুণী জানান, স্কয়ার হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিয়ে এলেও এবারই প্রথম তিনি এই ধরনের আচরণের শিকার হয়েছেন।
এ বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতালের ফেইসবুক পেইজে সোমবার সন্ধ্যায় চিকিৎসক ডা. কাজী শামসুন নাহারের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
সেখানে তিনি বলেন, “রোগী আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মনগড়া একটি অনৈতিক ব্যাখ্যামূলক অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা কোনোভাবে কাম্য নয়।
“তার সাথে অসদাচরণ করে থাকলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবার পূর্ণ অধিকার রাখেন। তা না করে তিনি আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এবং সামাজিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তা কোনোভাবে কাম্য নয়।”
স্কয়ার হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ ওই চিকিৎসকের বিবৃতির বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।