কোভিড-১৯: টিকা তৈরির দৌড়ে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানও

অন্য কোনোভাবে না পেরে নতুন করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকানোয় এখন টিকার আশায় রয়েছে পুরো বিশ্ব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে সেই কাজে নেমে পড়েছেন, কেউ কেউ অনেক দূর এগিয়েও গেছেন। এর মধ্যেই বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির দৌড়ে শামিল হওয়ার কথা জানিয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2020, 06:11 PM
Updated : 2 July 2020, 06:14 PM

ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে, তারা একটি টিকা তৈরির কাজ এগিয়েছে।

১৯৮৬ সাল থেকে দেশে ওষুধ প্রস্তত করে আসা গ্লোব ফার্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা গত ৮ মার্চ থেকে টিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে তা বাজারে আনার বিষয়েও আশাবাদী তারা।

তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল জানিয়েছে, দেশে কোভিড-১৯ রোগের টিকা তৈরির কোনো খবর তাদের জানা নেই।

তেজগাঁওয়ে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টিকা আবিষ্কারে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন গ্লোব বায়োটেকের সিইও ড. কাকন নাগ এবং সিওও ড. নাজনীন সুলতানা।

সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদের সঙ্গে পরিচালক মামুনুর রশিদ কিরণও উপস্থিত ছিলেন। কিরণ নোয়াখালীর একটি আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।

সংবাদ সম্মেলনে হারুন বলেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কেন্দ্রে প্রাণীর উপর তাদের তৈরি টিকার প্রাথমিক পরীক্ষা চালিয়েছেন তারা। এখন গ্লোব বায়োটেকের তেজগাঁওয়ের ল্যাবে বাকি কাজ চলছে।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারা বিশ্বের মানুষ বিপর্যস্ত। তাই অন্য দেশের আশায় বসে না থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে আমরা আমাদের নিয়মিত গবেষণার পাশাপাশি কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তকরণ কিট, টিকা ও ওষুধ তৈরি সংক্রান্ত গবেষণাকর্ম শুরু করেছি।”

টিকা সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ।

তিনি বলেন, খরগোশের উপর টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ‘সফল’ হয়েছেন তারা। মানবদেহেও তা সফল হবে বলে আশাবাদী তারা।

করোনাভাইরাস মহামারী থেকে পরিত্রাণে এখন টিকার আশায় সবাই (ফাইল ছবি)

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন বা এনসিবিআই ভাইরাস ডেটাবেজ অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পাঁচ হাজার ৭৪৩টি সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স জমা হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছে ৭৬টি।

“উক্ত সিকোয়েন্স বায়োইনফরম্যাটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে আমরা আমাদের টিকার টার্গেট নিশ্চিত করি। ওই টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ভাইরাস ডেটাবেজে জমা দিয়েছি, যা ইতোমধ্যেই এনসিবিআই কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রকাশিত হয়েছে।”

ড. আসিফ বলেন, তারা ৮ মার্চ কাজে হাত দিয়ে প্রাথমিক কাজ শেষে গত ১০ জুন খরগোশের উপর সম্ভাব্য টিকাটির পরীক্ষা শুরু করেন।

“১০ তারিখে সেগুলোকে আইসোলেশন করেছি, ১২ জুন আমরা প্রি-ইমিউন সিরাম কালেকশন করেছি। ১৪ দিন পর বিশ্লেষণ করেছি।”

যে কোনো রোগের টিকা তৈরির ক্ষেত্রে নানা ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মানবদেহে তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়, তাতে সফল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলেই তা টিকা হিসেবে গণ্য হয়।

আসিফ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রাণীদেহের উপর আরেকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করবেন তারা।

“এজন্য আমাদের ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে এখন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যাব। এরপর আমরা তাদের দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব। শিগগিরই প্রটোকল তৈরি করে মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এটি হস্তান্তর করা হবে।”

তবে প্রটোকল অনুযায়ী এখনও তারা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) কোনো অনুমতি নেয়নি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় কোম্পানিগুলোর টিকা আবিষ্কার নামার পর থেকে নানা অগ্রগতির খবর নিয়মিতই আসছে গণমাধ্যমে, তারা তা জানাচ্ছেনও। কিন্তু বাংলাদেশি কোম্পানিটির ঘোষণাটি আকস্মিকভাবেই এল।

জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অফিসিয়ালি আমাদের কাছে কেউ এ বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি। আমরাও এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।”

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ডা. মাহমুদ উজ জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আমাদের এখান থেকে ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের এখান থেকে তারা এ ধরনের অনুমতি নেয়নি। হয়ত তারা তাদের ল্যাবে কোনো এনিমেলের উপর ট্রায়াল করেছে। এখন হিউম্যান ট্রায়ালের আগে অনুমতি নেবে।”