করোনাভাইরাসে ফুসফুসে স্থায়ী ক্ষতির শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর সেরে উঠলেও রোগীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের ফুসফুস স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2020, 09:32 AM
Updated : 24 June 2020, 09:32 AM

হাজার হাজার রোগীকে তাই পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ডাকার প্রয়োজন পড়বে বলে দেশটির চিকিৎসকদের বরাতে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

ফুসফুসের টিস্যুর এই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা পালমোনারি ফাইব্রোসিস নামে পরিচিত। এই ক্ষতি আর সারানো যায় না। উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, কাশি ও ক্লান্তি।

ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) জানিয়েছে, তারা এই রোগীদের জন্য বিশেষায়িত পুনর্বাসন কেন্দ্র খুলছেন।

সেরে ওঠা রোগীদের হাসপাতাল ছাড়ার ছয় সপ্তাহ পর করা এক্স-রেতে ফুসফুসে মোটা সাদা দাগ দেখা গেছে যা পালমোনারি ফাইব্রোসিসের প্রাথমিক লক্ষণ নির্দেশ করে।

ব্রিটিশ সোসাইটি অফ থোরাসিক ইমেজিংয়ের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং রয়েল কলেজ অফ রেডিওলজিস্টসের উপদেষ্টা ডা. স্যাম হেয়ার বলেন, “সব কেস নিয়ে আমরা এই মুহূর্তে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারি না। তবে সাধারণত ছয় সপ্তাহের মধ্যে আপনি আশা করবেন যে স্ক্যানের ফল স্বাভাবিক আসবে। এটি হয়নি এবং এটিই উদ্বেগের বিষয়।”

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া কোভিড-১৯ রোগীদের ১২ সপ্তাহের মাথায় আবার এক্স-রে করে দেখা হবে ফুসফুসের সন্দেহজনক এই ক্ষত আরও খারাপ অবস্থায় গেছে কিনা।

কোভিড-১৯ এর কারণে ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিয়ে গবেষণা এখনও খুব প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ধারণা করা হয়, এই রোগে হালকা ভুগলে স্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, বিশেষ করে যাদের সংক্রমণ মারাত্মক হয় বা যারা আইসিউতে থাকেন তাদের ঝুঁকি বেশি।

গত মার্চে প্রকাশিত চীনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া ৭০ জন রোগীর মধ্যে ৬৬ জনেরই ফুসফুসে কোনো না কোনো ক্ষত রয়ে গেছে।

যুক্তরাজ্যের রেডিওলজিস্টরা বলছেন, স্ক্যানগুলির প্রাথমিক ফলাফলের ভিত্তিতে তারা মারাত্মক সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন।

কোভিড-১৯ নির্ণয়ে এনএইচএসের রেডিওলজি বিভাগের কার্যপ্রণালী ঠিক করতে সাহায্য করা ডা. হেয়ার বলেন, “ছয় সপ্তাহ পরের স্ক্যানগুলো দেখা থেকে এ পর্যন্ত আমি বলতে পারি, হাসপাতালে থাকা রোগীদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশের ফুসফুসের ক্ষত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।”

যুক্তরাজ্যের অন্যান্য রেডিওলজিস্টরাও বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারাও একই ধরনের বিষয় লক্ষ্য করছেন।

করোনাভাইরাসের আগের দুটি মহামারী সার্স ও মার্সের আরও বিশদ তথ্য অনুযায়ী, ২০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ রোগীর মধ্যে পালমোনারি ফাইব্রোসিসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।

পূর্বের মহামারী দুটি তুলনামূলক সফলভাবে আয়ত্মে আনা গেছে। কিন্তু নতুন করোনাভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা এর মধ্যেই ৯০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

এনএইচএসের হিসেব অনুযায়ী ইংল্যান্ডে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর ১ লাখেরও বেশি কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

ফুসফুসের ফাইব্রোসিস নিরাময় করা যায় না, কারণ ফুসফুসের টিস্যুতে ক্ষত স্থায়ী হয়। তবে নতুন ওষুধগুলি এই রোগের অগ্রগতি কমিয়ে আনতে পারে এবং সময়মতো শনাক্ত করা গেলে অগ্রগতি পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে।

কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়াদের জন্য ক্লিনিক পরিচালনা করা জাতীয় স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক গিসলি জেনকিন্স বলেন, “আমাদের এখন সমস্যাটি কত বড় এবং কখন চিকিৎসা করতে হবে তা বুঝতে হবে।”

“আমার আসল উদ্বেগ হলো, আমাদের জীবদ্দশায় এর আগে কখনও এত লোকের একই সময়ে ফুসফুসের এই ক্ষত দেখা যায়নি।”

এনএইচএস ইংল্যান্ড ফুসফুসের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতিসহ দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলি থেকে রোগীদের সেরে উঠতে সহায়তা করতে অনেক বিশেষায়িত কোভিড-১৯ পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করছে।