বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি দেখে চীনা বিশেষজ্ঞদের হতাশা

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতা ও চিকিৎসা কার্যক্রম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সফররত চীনা বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2020, 06:18 PM
Updated : 21 June 2020, 07:25 PM

দুই সপ্তাহের সফরের শেষ দিকে এসে শনিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তারা বলেছেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা যেমন খুবই কম, তেমনই কম নমুনা পরীক্ষা।

সংখ্যায় অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এই মহামারী মোকাবেলার লড়াইয়ে কঠোর পরিশ্রম করছেন বলেও মন্তব্য এসেছে চীনা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে চীনের উহান শহরে প্রথম দেখা দেওয়ার কয়েক মাসের মাথায় সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে নতুন করোনাভাইরাস।

কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে চীন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে পারলেও বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়ার পর বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়েছে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সহায়তার অংশ হিসাবে গত ৮ জুন দুই সপ্তাহের বাংলাদেশে আসে চীনের বিশেষজ্ঞ দল।

এরপর গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রায় সব অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ১০ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল।

চীনে ফেরার আগের দিন শনিবার ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন চিকিৎসক দলের সদস্যরা।

ভার্চুয়াল আয়োজনে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের মিশন উপ-প্রধান হুয়ালং ইয়ান তাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন। অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন চিকিৎসক দলের দুই সদস্য শুমিং শিয়ানু ও হাইতাং লিউ।

চীনের বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা

বাংলাদেশে সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে ইয়ান বলেন, “বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনও চূড়ায় পৌঁছেনি, কবে পৌঁছবে তাও বলা কঠিন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অবশ্যই পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লকডাউন করত হবে।

“এদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার খুবই অভাব। এটা দেখে চীনা চিকিৎসকদের বিশেষজ্ঞ দল ভীষণ হতাশ।”

বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার বাইরে অনেক জায়গায় ল্যাব নেই। সেজন্য নমুনা ঢাকায় পাঠিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয়।”

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের স্থায়িত্ব নিয়ে এক প্রশ্নে চীনা এই কর্মকর্তা বলেন, “এই পরিস্থিতি আরও ২-৩ বছর চলবে কি না, সেটা বলার মতো বৈজ্ঞানিক তথ্য এখনও জানা নেই।”

চীনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে চিকিৎসক শুমিং শিয়ানু বলেন, “এই সংক্রমণ যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেই উহান থেকে শুরু করে একের পর এক দেশের বিভিন্ন শহর ও প্রদেশ লকডাউন করেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এই কারণেই অন্য অনেক দেশের তুলনায় চীনে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা কম।”

তিন উপায়ে ভাইরাস মোকাবেলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “তিনটি উপায়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আক্রান্তদের চিকিৎসা, এই ভাইরাসের ট্রান্সমিশন বন্ধ করা এবং যারা আক্রান্ত হননি, তাদের রক্ষা করা।”

করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

লকডাউনের সুপারিশ

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগের সুপারিশসহ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কাছে পৃথক চারটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

চীনা দূতাবাসের মিশন উপ-প্রধান হুয়ালং ইয়ান বলেন, দুই সপ্তাহের সফরে চীনা মেডিকেল টিম বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

“ঢাকা ছাড়ার আগে সোমবার তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর সুপারিশ তৈরি করে দূতাবাসের মাধ্যমে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই চারটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকারের কাছে পৌঁছানো হবে।”

কঠোর লকডাউনের সুপারিশ আসছে কি না- এ প্রশ্নে চীনের উদাহরণ টেনে ইয়ান বলেন, “অবশ্যই। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে লকডাউন অত্যন্ত কার্যকরী।”

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালুর বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বা পুনরায় শুরু করতে দেশের কোন অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেশি, তা চিহ্নিত করতে হবে। কোন কোন ফ্যাক্টরিতে এই রোগ ছড়াতে পারে, তা খুঁজে বের করতে হবে।”

ভাইরাসের টিকা প্রসঙ্গে ইয়ান বলেন, “সুখবর হলো চীনে পাচঁটি কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরি করছে। ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শেষ হলে তা প্রথম পাওয়ার তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে।”