জিনগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে কোভিড-১৯ ঝুঁকির সম্পর্ক দেখছেন ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা

ইউরোপের বিজ্ঞানীদের একটি দল দুটি জিনগত বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছেন যা দেখাতে পারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়া এবং মারা যাওয়ার ঝুঁকি কাদের বেশি। রক্তের গ্রুপের সঙ্গেও ঝুঁকির সম্পর্ক দেখতে পেয়েছেন তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2020, 08:29 AM
Updated : 18 June 2020, 08:29 AM

সিএনএন জানায়, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে বুধবার গবেষণাটির ফল প্রকাশিত হয়। কেন কিছু লোক ভাইরাসে এতো মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন আর অন্যদিকে কেন কিছু মানুষের কোনো উপসর্গই ধরা পড়ছে না – এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এই গবেষণা থেকে।

বিজ্ঞানীরা তাদের নিবন্ধে লিখেছেন, জেনেটিক উপাত্তগুলো থেকে তারা দেখেছেন, যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’, তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি অন্য গ্রুপগুলোর তুলনায় বেশি। অন্যদিকে ‘ও’ গ্রুপের রক্তের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অন্য গ্রুপগুলোর তুলনায় কম।

অন্য গ্রুপগুলোর তুলনায় ‘এ’ গ্রুপের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ বেশি। আর ‘ও’ গ্রুপের রক্ত যাদের, তাদের অন্য গ্রুপগুলোর রক্তের মানুষদের তুলনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ কম।

জার্মানির কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকুলার মেডিসিনের অধ্যাপক আন্ড্রে ফ্রাঙ্কের নেতৃত্বে গবেষকরা স্পেন ও ইতালির ১ হাজার নয়শর বেশি গুরুতর অসুস্থ করোনাভাইরাস রোগীকে নিয়ে গবেষণা করেন এবং তাদের সঙ্গে তুলনা করেন অসুস্থ ছিলেন না এমন ২ হাজার ৩০০ জনের। তারা পুরো জেনেটিক ম্যাপ ঘেঁটে ডিএনএ -এর দুটি বৈচিত্র্য খুঁজে পান, যা সবচেয়ে অসুস্থ রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা দিয়েছিল। জেনোমের এই দুই জায়গার সঙ্গে শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা হারানোর ঝুঁকি সম্পর্কিত।

তবে রক্তের গ্রুপ এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত কিনা তা গবেষকরা বলতে পারছেন না। এটা হতে পারে, জিনগত যে বৈশিষ্ট্য কারও ঝুঁকি প্রভাবিত করে তার সঙ্গে রক্তের গ্রুপও সম্পর্কিত থাকতে পারে।

জিনগত দুটি বৈশিষ্ট্য কোনো ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। সাইটোকাইন স্টর্ম বা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিপ্রতিক্রিয়াকে অনেক রোগীর ওপর করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রভাবের জন্য দায়ী করা হয়।

উইসকনসিন মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান হিমাটোলজিস্ট ডা. রয় সিলভারস্টাইন মনে করেন রক্তের গ্রুপের সঙ্গে ঝুঁকির সম্পর্ক থাকাটা বিশ্বাসযোগ্য।

তিনি বলেছিলেন, রক্তের গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে এমন জিনগুলো কোষের পৃষ্ঠতলের কাঠামোগুলোকেও প্রভাবিত করে। ফলে তা এই কোষগুলোকে সংক্রমিত করার জন্য ভাইরাসের ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়াও, রক্তের গ্রুপ রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির সাথে যুক্ত। তাই এটি এখন স্পষ্ট যে গুরুতর করোনাভাইরাস সংক্রমণে সারা শরীর জুড়ে অস্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা কেন দেখা যায়।

তবে আমেরিকান সোসাইটি অফ হিমাটোলজির সাবেক সভাপতি সিলভারস্টাইন সিএনএনকে জানান, গড়পড়তা মানুষের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ফলগুলোর গুরুত্ব খুব কম। ঝুঁকি বাড়া-কমাটা যদিও অনেক বিশাল শোনায়, কিন্তু পুরো একটি জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করলে এটা তেমন বড় না।

“ঝুঁকিতে নিখুঁত পার্থক্য খুব কম। ঝুঁকি কমা পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে, তবে এটি প্রকৃত ঝুঁকির একটি সামান্য পরিবর্তন। আপনার ‘ও’ গ্রুপের রক্তের কাউকে বলা ঠিক হবে না যে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম।” 

গবেষকরা বলছেন, গবেষণাটির ফল বরং করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধ ও ভ্যাকসিনের উন্নয়নে বেশি উপকার আসবে।