সিএনএনজানিয়েছে, ভাইরাসের এই পরিবর্তন মহামারীর গতিপ্রকৃতি বদলে দিতে পারে কিনা তা দেখতেআরও গবেষণার প্রয়োজন বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
তবেগবেষণাটির সঙ্গে জড়িত নন এমন একজন বিজ্ঞানী বলছেন, সম্ভবত ভাইরাসটি পরিবর্তিত হয়েছে,যা ব্যাখ্যা করে যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকায় কেন এত সংক্রমণ ঘটেছে।
বিজ্ঞানীরাভাইরাসটির পরিবর্তিত হওয়া নিয়ে অনেক আগে থেকেই আশঙ্কা করছিলেন।
ফ্লোরিডারস্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা জানান, মিউটেশনটি ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকেপ্রভাবিত করে। এটি ভাইরাসটির বাইরের একটি কাঠামো, যা এটি মানব কোষে প্রবেশের জন্য ব্যবহারকরে। যদি গবেষণার ফলগুলো নিশ্চিত হয় তবে বলা যাবে, প্রথমবারের মতো কেউ দেখাতে পেরেছেযে ভাইরাসের পরিবর্তনগুলি মহামারীটির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
এই গবেষণায়নেতৃত্ব দেওয়া স্ক্রিপস রিসার্চের ভাইরোলজিস্ট হেইরিয়ুন চো এক বিবৃতিতে বলেন, “গবেষণাগারেসেল কালচার সিস্টেমে রূপান্তরিত ভাইরাসগুলি অপরিবর্তিত ভাইরাসের চেয়ে বেশি সংক্রামকছিল।”
কয়েকদিনআগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দাবি করে, নতুন করোনাভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত দেখা মিউটেশনগুলিউন্নয়নের পর্যায়ে থাকা ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলবে না। আর গত সপ্তাহেতারা বলেছিল, রূপান্তরের কারণে ভাইরাস আরও সংক্রমণযোগ্য হয় না এবং মারাত্মক অসুস্থতারসম্ভাবনাও বাড়ায় না।
চো এবংসহকর্মীরা গবেষণাগারে একাধিক পরীক্ষা চালিয়ে দেখেন ‘ডি৬১৪জি’ নামের একটি মিউটেশন ভাইরাসটিকেআরও অনেক স্পাইক দেয় এবং সেই স্পাইকগুলিকে আরও স্থিতিশীল করে তোলে। এর ফলে এটি কোষগুলিতেআরও সহজে ঢুকতে পারে।
গবেষকরাতাদের ফলগুলো বায়োআরক্সিভ নামে একটি প্রিপ্রিন্ট সার্ভারে পোস্ট করবেন। এর মানে এইক্ষেত্রের অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা গবেষণাটি এখনও পর্যালোচনা করেননি।
তবেচো এবং তার সহকর্মীরা তাদের কাগজপত্র একজন বায়োলজিস্ট, বায়োটেকনোলজির উদ্যোক্তা ওঅ্যাক্সেস হেলথ ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান উইলিয়াম হ্যাসলটাইনকে পাঠিয়েছিলেন।তিনি মনে করছেন, এই গবেষণার ফলই ব্যাখ্যা করে পুরো আমেরিকা জুড়ে করোনভাইরাস কীভাবেসহজে ছড়িয়ে গেল।
“জানুয়ারিরমাঝামাঝি সময়ে একটি পরিবর্তন ঘটেছিল, যা ভাইরাসটিকে আরও সংক্রামক করে তোলে। এর অর্থএই নয় যে এটি আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে। তবে এটি ভাইরাসটিকে প্রায় ১০ গুণ বেশি সংক্রামককরে তোলে।”
অন্যান্যগবেষকরাও কিন্তু এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। গত এপ্রিলে লস অ্যালামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিরবেটি কর্বার ও তার সহকর্মীরা ডি৬১৪জি রূপান্তরকে “জরুরি উদ্বেগের” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
“এটিইউরোপে ফেব্রুয়ারির শুরুতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। নতুন অঞ্চলে এটি ছড়ানোর পর এটাইপ্রভাবশালী রূপে পরিণত হয়।”
ডি৬১৪জিরূপান্তরটিই বর্তমানে ভাইরাসটির সবচেয়ে সাধারণ রূপ কিনা তা প্রমাণে আরও পরীক্ষার প্রয়োজনছিল যা স্ক্রিপসের গবেষকরা করেছেন।
ভাইরাসমানবদেহে সংক্রমিত হলে, তারা কোষগুলোর দখল নিয়ে কারখানা বানিয়ে অনুলিপির পর অনুলিপিতৈরি করে। তবে এটি করতে প্রথমে তাদের অবশ্যই কোষগুলিতে ঢোকার একটি উপায় খুঁজে বেরকরতে হবে।
হ্যাসলটাইনজানান, স্ক্রিপসের গবেষকরা এটা তিনটি আলাদা পরীক্ষায় দেখিয়েছেন। রূপান্তরটির ফলেভাইরাস আরও সহজে কোষগুলিতে সংযুক্ত হতে এবং কোষের ভেতর প্রবেশ করতে পারে।
হ্যাসলটাইনজানান এর প্রভাবগুলি গুরুত্বপূর্ণ, “এর অর্থ হলো, ক্রমাগত পরিবর্তনের জন্য আমাদের সতর্কথাকতে হবে।”
“ভাইরাসটিনিয়ন্ত্রণে আমরা যা কিছু করি না কেন, এটি প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আমরা ওষুধ তৈরি করলেএটি প্রতিরোধ করতে চাইবে। আমরা একটি ভ্যাকসিন তৈরি করলে, এটি তা এড়িয়ে যেতে চাইবে।আর আমরা বাড়িতে বসে থাকলে এটি বের করার চেষ্টা করবে কীভাবে আরও দীর্ঘসময় টিকে থাকাযায়।”