যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কারে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
উন্নয়ন গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাজেটে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনার প্রত্যাশা থাকলেও তার প্রতিফলন ঘটেনি।
স্বাস্থ্য খাতে ‘দুর্নীতি’র যে খবর রয়েছে সেখানে এই অর্থ ঠিকমতো ব্যয় করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তিনি।
তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন বিআইডিএসের গবেষক জায়েদ বখত এবং সানেমের সেলিম রহমান।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেছেন, “স্বাস্থ্যের জন্য যে ব্যাপক সংস্কার দরকার, তার সূচনা এই বাজেটে হওয়া দরকার। সেজন্য পরিকল্পনা করার সময় আমাদের এখনো আছে।
“আমি বলব, জনস্বাস্থ্যকে কেন্দ্র রেখে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চাহিদা অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে।”
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যে উত্থাপিত বাজেটে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার ফর্দে স্বাস্থ্য খাতের জন্য সব মিলিয়ে ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বরাদ্দের এই অংক জিডিপির ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মোট বাজেট বরাদ্দের ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যে কোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দও রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ছিল জিডিপির মাত্র ০ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং পুরো বাজেটের আকারের ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
বরাদ্দ অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে মনোযোগী হওয়ার তাগাদা দিয়ে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির কথা আমরা সবাই জানি। শুধু টাকা বরাদ্দ দিলেই হবে না, এই টাকার যেন যথাযথ ব্যবহার হয়, অপচয় না হয়, দুর্নীতি না হয়- সেটাই এখন সবচেয়ে বড় বিষয়।”
তিনি বলেন, “দক্ষ জনবলের অভাব থেকে শুরু করে অনেক সমস্যা আছে, যেটা স্বল্পমেয়াদে টাকা বেশি খরচ করে সমাধান করে ফেলা যাবে না।”
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, “এই বাজেটে আমি খুব বেশি আশা করি না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে হবে। আমাদের এই মুহূর্তে যা আছে সেটাকে খুব ভালো মতো ব্যবহার করা এবং বাস্তবায়ন করা খুব জরুরি।”
স্বাস্থ্য খাতে টাকা বাড়ানোর চেয়ে লকডাউন ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা, অক্সিজেনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“এগুলো ঠিক মত করতে না পারলে আমরা সব দিকে ব্যর্থ হয়ে যাব।”
“এই যে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হল, সেটিকে আমি অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। কিন্তু, এখানে পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, স্বাস্থ্যখাতের ব্যবস্থাপনার যে বেহাল দশা সেটির উন্নয়ন করা হচ্ছে। ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন না ঘটলে, এই বর্ধিত বরাদ্দ সত্যিকার অর্থেই কতটুকু কার্যকরী হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।”
পরামর্শ
স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রিধারী এই গবেষক বলেন, “স্বাস্থ্যকে যদি পিরামিড আকারে চিন্তা করি তাহলে একদম তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেটা কিন্তু এখনও যথেষ্ট নয়। এখানে খুব কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে।”
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের অন্যতম পরামর্শক হিসাবে কাজ করছেন ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক।
গ্রামাঞ্চলের মত শহরাঞ্চলে জনস্বাস্থ্য কাঠামো তৈরির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “শহরাঞ্চলে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবাটা অবশ্যই শুরু করা দরকার। তাহলে মহামারী প্রতিরোধ করা, মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা, জনস্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করা আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে যাবে।”
গবেষণার জন্য আইইডিসিআর ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলকে সম্প্রসারণ করার সুপারিশ করে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “শীর্ষ পদে মহাপরিচালকের মত পদ তৈরি করে এসব প্রতিষ্ঠানকে সম্প্রসারণ করা দরকার।”
প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাস্থ্যসেবাকে সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে ডা. মুশতাক বলেন, “তৃণমূল পর্যায়ে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতালের সম্প্রসারণ করতে হবে এবং লোকবল দিতে হবে। তাহলে জরুরি সেবার ক্ষেত্রে চতুর্থ পর্যায়ের সুপার স্পেশাল হাসপাতালের চাপ পড়বে না। আগে থেকে অনেকগুলো রোগের সমাধান হয়ে যাবে।”