কোভিড-১৯ চিকিৎসায় অ্যান্টিবডি থেরাপি নিয়ে ‘হিউম্যান ট্রায়াল’ শুরু

যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ইলাই লিলি কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য একটি অ্যান্টিবডি থেরাপি নিয়ে রোগীদের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2020, 05:29 AM
Updated : 3 June 2020, 05:29 AM

কোম্পানিটি সোমবার সিএনএনকে জানিয়েছে, পরীক্ষার প্রথম পর্যায়ে দেখা হবে থেরাপিটি নিরাপদ এবং সহনীয় কিনা। জুনের শেষের দিকে ফলগুলো পাওয়া যেতে পারে।

এই থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া কোভিড-১৯ রোগীরা নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রসম্যান স্কুল অফ মেডিসিন, লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই এবং আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এ পদ্ধতি সফল হলে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাজারে ড্রাগটি ছাড়া হতে পারে।

ইলাই লিলির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ড্যান স্কোভ্রনস্কি বলেন, “এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা নতুন কিছু রোগের জন্য তৈরি করা ওষুধ কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কাজ করে কিনা দেখার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এই মহামারী শুরু হওয়ার সাথে সাথেই আমরা এই রোগের বিরুদ্ধে একটি নতুন ওষুধ তৈরির কাজ করতে শুরু করি। এখন আমরা প্রস্তুত এবং রোগীদের ওপর এটি পরীক্ষা করছি।”

কানাডা-ভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাবসেলেরার সঙ্গে যৌথভাবে এই অ্যান্টিবডি থেরাপির উন্নয়ন ঘটায় ইলাই লিলি।

যখন কেউ কোভিড-১৯ -এর মতো কোনো রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেন, তার দেহ অ্যান্টিবডি নামে কয়েক মিলিয়ন প্রোটিন তৈরি করে, যা এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং তাকে সুস্থ করতে সহায়তা করে। কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রোগীদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে অ্যাবসেলেরা রক্তের নমুনা নিয়েছিল। শত শত অ্যান্টিবডি খুঁজে পেতে এই রোগীর লাখ লাখ কোষ তারা বিশ্লেষণ করে।

অ্যাবসেলেরার বিজ্ঞানিরা এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি এবং ইনফেকশাস ডিজিজেজ এর ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টার এরপর বাছাই করেছে কোন অ্যান্টিবডিগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী। আর লিলির বিজ্ঞানীরা বের করেছেন এর মাধ্যমে কিভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলা হয় মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি।

এই পদ্ধতি এর আগে অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় কাজ করেছে। এইচআইভি, অ্যাজমা, লুপাস, ইবোলা এবং কয়েক প্রকারের ক্যান্সারের চিকিৎসায় মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি রয়েছে।

স্কোভ্রনস্কি জানান, এ ধরনের থেরাপি কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কাজ করবে কিনা তা পরিষ্কার নয়। তবে গবেষণাগারে কোষগুলিতে ব্যবহার করে দেখা গেছে, এটি কোষগুলিকে সংক্রামিত করার জন্য ভাইরাসের সক্ষমতাকে বাধা দিয়েছে।

এই উপাত্ত এখনও প্রকাশ করা হয়নি, তবে ওই ফলগুলোর ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা পরবর্তী ধাপে যাওয়ার এবং রোগীদের শরীরে এটি পরীক্ষা করার সবুজ সংকেত পেয়েছেন।

“আমরা একে বলছি এলওয়াই-কোভ৫৫৫, লাকি ট্রিপল ফাইভ।”

পরীক্ষা সফল হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরের ধাপের পরীক্ষা শুরু হবে। দ্বিতীয় ধাপে হাসপাতালে ভর্তি হয়নি এমন ব্যক্তিসহ অনেক বেশি সংখ্যক রোগীর ওপর এটি পরীক্ষা করা হবে।

এই ড্রাগ কোভিড-১৯ প্রতিরোধেও কাজ করে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার পরিকল্পনা রয়েছে। যেসব রোগীর জন্য টিকা করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ভালো কোনো উপায় হবে না, যেমন বয়স্করা ও দীর্ঘদিন ধরে যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই ড্রাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।

ইলাই লিলি এরই মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি থেরাপি তৈরি করা শুরু করে দিয়েছে যাতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় এবং ট্রায়ালের বাইরে রোগীদের জন্য তা কাজে লাগানো যায়।

সাধারণত করোনাভাইরাসের মতো মহামারী না হলে কোম্পানিগুলো ওষুধ তৈরি করার আগে অপেক্ষা করে পরীক্ষায় ওষুধটি ঠিকমতো কাজ করে কিনা জানতে। স্কোভ্রনস্কি জানালেন কেন আগেই তৈরি করা শুরু করেছে তার কোম্পানি।

“যদি এটি কাজ করে তবে আমরা একটি দিনও নষ্ট করতে চাই না। আমরা যত বেশি সম্ভব মানুষকে দ্রুত সহায়তা করার জন্য যতটা বেশি সম্ভব ওষুধ পেতে চাই।”

ইলিয়া লিলি জানায়, পরের কয়েক মাসের পরীক্ষাগুলোতে তারা অন্যান্য কয়েকটি অ্যান্টিবডির মিশ্রণ নিয়ে কাজ করবে। তবে স্কোভ্রনস্কির কাছে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো ফল হবে যদি একটি অ্যান্টিবডি অপেক্ষাকৃত কম ডোজে ব্যবহার করা যায়।

“যত বেশি অ্যান্টিবডি একসাথে মেশানো হবে এবং ডোজ যত বেশি হবে ওষুধ উৎপাদন করাটা তত বেশি কঠিন হবে।”

“যদি দেখা যায়, দুটি অ্যান্টিবডি উচ্চতর ডোজে, এমনকি তিনটি অ্যান্টিবডি একসাথে উচ্চমাত্রায় ডোজেও দিতে হচ্ছে, তবে আমরা রোগীদের কার্যকর ওষুধ তৈরি করতে যা কিছু করা দরকার তা করব।”