করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ‘তেমন’ মৃত্যু ঘটাচ্ছে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ইউরোপ ও আমেরিকায় নতুন করোনাভাইরাসে লাখো মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে দেশের মৃত্যুহার তুলনা করে স্বস্তি পেতে চাইছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2020, 02:07 PM
Updated : 13 May 2020, 02:07 PM

তিনি বলেছেন, “আপনারা জানেন অনেক রোগ আছে, যে রোগে অনেক লোক মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু পারতপক্ষে এই রোগটি, এই ভাইরাসটি …. আমি মনে করি না এইভাবে কোনো ভয়ানক রোগ। করোনাভাইরাস বাংলাদেশে তেমনভাবে মৃত্যু ঘটাচ্ছে না।”

বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসে সর্বাধিক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর দিন বুধবার ঢাকার মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে নতুন চিকিৎসক ও নার্সদের যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ এ বাংলাদেশে এই পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে মারা গেছে ২৬৯ জন।

বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের মধ্যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ মারা গেছে। অন্য  অনেক দেশের তুলনায় এই হার বেশ কম।

আক্রান্তদের মধ্যে ফ্রান্সে ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে ১৪ শতাংশ, স্পেনে ১১ শতাংশ, বেলজিয়ামে ১৭ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ শতাংশ, ভারতে ৩.৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ২.১ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে।

তবে বাংলাদেশে রোগী শনাক্ত এবং মৃত্যুর তথ্য নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে। আর কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রণালয়ের কাজ নিয়েও রয়েছে বিস্তর সমালোচনা।  

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, করোনায় প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। অনেকের মধ্যে কোনো লক্ষণও দেখা যায় না। এই রোগে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। স্বাভাবিক চিকিৎসাতেই তারা ভালো হয়ে যায়।”

কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকার জরুরি ভিত্তিতে যে দুই হাজার চিকিৎসক ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে, তাদের যোগদান অনুষ্ঠানই হয় বুধবার।

মন্ত্রী জাহিদ মালেক সদ্য যোগদানকৃত চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, “কোভিডের কারণেই আপনাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেই অর্থে এই কোভিড আপনাদের ভাগ্যই খুলে দিয়েছে। কাজেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্যসেবায় পিছপা হবেন না। আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিজ পরিবারের একজন সদস্য ভেবে সেবা দেবেন।”

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এদিন নতুন ২ হাজার চিকিৎসকের পদায়ন শেষে ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। তবে করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে কর্মশালায় ৪০ জন চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।

মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়টি তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন,

“এটা একটি বিরল ঘটনা। খুব শিগিহিরই আমাদের আরও বেশকিছু টেকনোলজিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। এসব নিয়োগ হলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান নিঃসন্দেহে আরও বৃদ্ধি পাবে।”

নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সদের উদ্দেশে জাহিদ মালেক বলেন, “আপনারা কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা করবেন। নন কোভিড রোগীর চিকিৎসাও আপনাদের করতে হবে। চিকিৎসার মধ্যে কোনো তফাৎ করা যাবে না, সবাই রোগী।”

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, নিউরো সার্জন ও বিসিপিএসের সভাপতি কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, স্বাস্থ্যসেবা শাখার অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা। নবাগত চিকিৎসকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ডা. আর রাফি তামজীদ ও ডা. নাজিয়া হাসান জিনা।