স্থূলতায় বাড়তে পারে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি?

স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগ, ক্যান্সার, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে- এমনটা আকছারই শোনা যায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2020, 10:09 AM
Updated : 8 May 2020, 12:36 PM

এখন বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, স্থূলদেহীরা নভেল করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতেও আছেন।

আসলেই কি ঝুঁকিতে স্থূলদেহীরা?

বেশ কয়েকটি গবেষণায় এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৭০০০ রোগীর মধ্যে যারা স্থূলদেহী, অর্থাৎ যাদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) ৩০ এর ওপরে, তাদের মৃত্যুঝুঁকি স্বাভবিক ওজনের রোগীদের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি ছিল।  

ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ডের ওপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ওজনের রোগীদের কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। গবেষকদের মতে, এমন রোগীদের হৃদরোগ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো অন্যান্য শারীরিক জটিলতা থাকলে, ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।

যুক্তরাজ্যেই অন্য আরেকটি গবেষণায় এসেছে, সেখানে যেসব কোভিড-১৯ রোগীদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়েছে, তাদের ৭৩ শতাংশেরই অতিরিক্ত ওজন ছিল।

কোনো ব্যক্তির ওজন এবং উচ্চতার অনুপাতে পরিমাপ করা হয় তার বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই।

বিএমআই ২৫.০০ থেকে ২৯.৯ এর মধ্যে থাকলে ওজনাধিক্য এবং ৩০.০০ থেকে ৩৪.৯ মধ্যে হলে স্থুলতা ধরা হয়।

করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের একটি বড় অংশের বিএমআই ২৫ এর বেশি হবে বলে আগেই সতর্ক করেছিল ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফাউন্ডেশন।

যুক্তরাষ্ট্র, ইটালি ও চীনও এই ভাইরাসে আক্রান্তদের প্রাথমিক তথ্য পর্যালোচনা করে একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

তবে বয়স্ক, বিভিন্ন জটিল শারীরিক জটিলতা থাকলে সমস্যা থাকলে এবং পুরুষদের কোভিড-১৯ এ জটিলভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি বলে উঠে এসেছে গবেষণায়।

যে কারণে স্থূলতা ঝুঁকি

আপনার ওজন অতিরিক্ত হওয়ার মানে হচ্ছে আপনি অনেক বেশি চর্বির ভার বইছেন। তাছাড়া আপনি শতভাগ ফিট তো ননই, আপনার ফুসফুসের কর্মক্ষমতাও কম। এর ফলে রক্ত এবং আপনার পুরো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যা হবে। আপনার হৃদযন্ত্র ও রক্তপ্রবাহেও এর প্রভাব পড়বে।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাভিদ সাত্তার বলেন, “বাড়তি ওজনের মানুষের শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বেশি থাকে। এর মানে হচ্ছে, তাদের শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো অনেক বেশি চাপের মধ্যে থাকে।”

করোনাভাইরাসের মতো সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ডিয়ান সেলাইয়ার মতে, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে অক্সিজেন না পৌঁছানোয় স্থূল দেহ এক সময় চাপ নিতে পারে না।

এ কারণেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলদেহী রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাস ও কিডনি স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এইস২ নামের এনজাইমের মাধ্যমে মূলত শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করে। এই এনজাইমটি সবচেয়ে বেশি থাকে মেদ বা চর্বিযুক্ত টিস্যুতে। আর স্থূলদেহীদের চামড়ার নিচে কিংবা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আশপাশে আরও বেশি থাকে।

স্থূলদেহীদের রোগাক্রান্ত কিংবা অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার এটিও একটি কারণ হতে পারে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- ভাইরাসের সাথে লড়াই করতে মানুষের যে সক্ষমতা, অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, সেটা স্বাভাবিক ওজনের মানুষের চেয়ে স্থূলদেহীদের খুব একটা ভালো নয়।

শরীরের চর্বিতে থাকা মাইক্রোফেইজ নামের কোষ যখন বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে তখনই মূল সমস্যাটা দেখা দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এই বেশি সক্রিয় হওয়াকে বিজ্ঞানীরা বলছেন ‘সাইটোকাইন ঝড়’, যার ফলে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ডা. সেলিয়াহ বলেন, “স্থূলদেহীদের এই ভারাইস প্রতিরোধের সক্ষমতা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে। হয় তো এজন্যই কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থূলদেহীদের এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে।”

হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কি সমস্যা হতে পারে?

অতিরিক্ত ওজন কিংবা স্থূলদেহীদের হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা দিতে গিয়ে নানা বিপত্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে করে শরীরে টিউব প্রবাশে করাতে এবং স্ক্যানিং করাতে সমস্যা হয়।

অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেক সময় এ ধরনের রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার জন্য উপুড় করতে কিংবা কাত করতেও ঘাম ঝরাতে হয়।