কোভিড-১৯: সারতে লাগে কত দিন

চীন থেকে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সূচনা হয়েছিল প্রায় চার মাস আগে; কিন্তু লক্ষণ বলছে, হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়া রোগীদের পুরো স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ফিরে পেতে লাগতে পারে আরও বহু দিন। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2020, 02:17 AM
Updated : 21 April 2020, 04:01 AM

বিশ্বে এ পর্যন্ত ২৪ লাখের বেশি মানুষের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে, আর সেরে উঠেছেন ৬ লাখ ৩৬ হাজার রোগী।

কিন্তু এই ভাইরাস একবার শরীরে বাসা বাঁধলে কতদিন লাগছে সুস্থ হতে?

বিবিসির এক প্রতিবেদন বলছে, একজন রোগীর সুস্থ হতে কত সময় লাগবে তা নির্ভর করবে ভাইরাসের সংক্রমণে তার শরীর কতটা কাবু হচ্ছে তার ওপর।

কেউ কেউ দ্রুতই সুস্থ হয়ে ওঠেন। আবার কিছু রোগীর ক্ষেত্রে নানা রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা চলতে পারে চলতে পারে অনেক দিন।

বয়স, লিঙ্গ এবং অন্যান্য স্বাস্থগত জটিলতাও কোভিড-১৯ রোগে গভীর প্রভাব রাখে।

উপসর্গ মৃদু হলে

মৃদু অসুস্থ রোগীরা দ্রুত ও ভালোভাবেই সুস্থ হয়ে ওঠেন।

কোভিড-১৯ রোগীদের নানা উপসর্গ বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশের ক্ষেত্রে কাশি ও জ্বরের মত সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়।

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে গায়ে ব্যথা, ক্লান্তি, গলাব্যথা বা মাথাব্যথাও হতে পারে।

শুরুতে অনেকেরই শুকনো কাশি হতে পারে। শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকলে কাশির সাথে ফুসফুসের মরা কোষও বেড়িয়ে আসতে পারে।

এমন শারীরিক অবস্থায় বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। ব্যথা কমাতে ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামলও দেওয়া হতে পারে।

উপসর্গ মৃদু হলে সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই জ্বর কমে যায়, কফ থাকতে পারে আরো কিছুদিন।

চীনা রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৃদু সংক্রমণের ক্ষেত্রে সেখানে রোগীদের সেরে উঠতে গড়ে দুই সপ্তাহের মত সময় লেগেছে।

অসুস্থতা যদি গুরুতর হয়

নতুন এ ভাইরাস কাউকে কাউকে অনেক বেশি কাবু করে ফেলতে পারে। সাধারণত সংক্রমণের পর সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে তাদের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়। আর তা হয় হঠাৎ করেই।

তখন রোগীল শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা দেখা দিতে পারে, ফুসফুসে পানি জমতে পারে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লড়াই চালিয়ে গেলেও অ্যান্টিবডি ও ভাইরাসের এই যুদ্ধে ফুসফুসের অনেক কোষ মারা যায়। তাতে ফুসফুস কিছুটা কমজোরি হয়ে ওঠে বলে আগের তুলনায় বেশি অসুস্থ বোধ করেন রোগী।  

এই অবস্থায় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে অনেক রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়।

ব্রিটিশ চিকিৎসক সারাহ জারভিস বলেন, শ্বাসকষ্টের জটিলতা সারতে একটু সময় লাগতে পারে।

এ ধরনের রোগীর ধকল কাটিয়ে উঠতে দুই থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তবে ক্লান্তি আর দুর্বলতা থেকে যেতে পারে আরও কিছুদিন।

যদি আইসিইউ লাগে?

এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি ২০ জনে একজন রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

এ সময় রোগীর শ্বাস-প্রশাস স্বাভাবিক রাখতে ভেন্টিলেটরও ব্যবহার করতে হতে পারে।

বিবিসি লিখেছে, যে কোনো অসুস্থতার ক্ষেত্রে রোগীকে আইসিইউ বা সিসিইউতে নিতে হলে তার সেরে উঠতে সাধারণত দীর্ঘ সময় লাগে। আইসিইউ থেকে ছাড়া পেলেও বাড়ি ফেরার আগে রোগীকে সাধারণ ওয়ার্ডে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যালিসন পিটটার্ড বলেন, আইসিইউ থেকে ছাড়া পেলেও শরীরের পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পেতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লেগে যেতে পারে।

দীর্ঘদিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকার কারণে অনেকের পেশী দুর্বল হয়ে যায়। তখন অনেক রোগীকেই স্বাভাবিক হাঁটাচলার শক্তি ফিরে পেতে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়।

আইসিইউতে যে ধরনের চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে একজন রোগীকে যেতে হয়, তাতে অনেক সময় মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতায় বা মানসিকভাবেও প্রভাব পড়তে পারে।

কার্ডিফ অ্যান্ড ভেল ইউনিভার্সিটি হেলথ বোর্ডের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ফিজিওথেরাপিস্ট পল টুস বলেন, ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে যে ফ্যাটিগ তৈরি হয়, তার সঙ্গে আইসিইউর চিকিৎসার ধকলও বাড়তি অবসাদ যোগ করতে পারে।

চীন ও ইতালির রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ ধরনের রোগীদের শরীর দুর্বল হয়ে যায়। কাশি আর শ্বাসকষ্ট অনেক দিন ভোগায়। সেই সঙ্গে প্রচুর ঘুমের চাহিদা দেখা দেয় রোগীদের মধ্যে। 

পল টুস বলেন, “এ পর্যায়ে সেরে উঠতে রোগীর বেশ খানিকটা সময় লাগেই, সেটা কয়েক মাসও হতে পারে।”

তবে সাধারণভাবে এক কথায় কিছু বলা কঠিন। কারণ কোনো কোনো রোগী খুব অল্প সময়ে আইসিইউ থেকে ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন, আবার কাউকে কাউকে কয়েক সপ্তাহও থাকতে হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব পড়বে?

এ মহামারীর বয়স চার মাসও পুরো হয়নি। নতুন ধরনের এ করোনাভাইরাস নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। সেরে ওঠা রোগীদের দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণের সুযোগ যেহেতু এখনও হয়নি, তাই দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব পড়তে পারে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

ভাইরাস সংক্রমণে ফুসফুসের বেশি ক্ষতি হলে অনেকের অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রম (এআরডিএস) দেখা দিতে পারে।

এমনকি সুস্থ হওয়ার পরের পাঁচ বছরও এ ধরনের জটিলতার মধ্যে দিয়ে রোগীকে যেতে হতে পারে বলে জানান টুস।

দীর্ঘদিন রোগে ভুগলে রোগী মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন। এ ধরনের রোগীদের সেরে ওঠার জন্য মানসিক সহায়তাও জরুরি বলে মনে করেন ওয়ারউইক মেডিকেল স্কুলের শিক্ষক ডা. জেমস গিল।

আরও খবর-