ঘরে বানানো হ্যান্ড স্যানিটাইজার কতটা কাজের?

হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে এত কথা আগে কখনও মানুষকে বলতে হয়নি। নভেল করোনাভাইরাস নামে নতুন এক আতঙ্ক হাজির হওয়ার পর দোকান থেকে সাবান, হ্যান্ড ওয়াশের পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজারও হাওয়া হয়ে যেতে থাকল। এমনকি ঘরে বসে কী করে ওই জীবাণু নাশক তরল বানানো যায়, সেই কেমিস্ট্রিও ঘুরতে লাগল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2020, 06:33 PM
Updated : 10 April 2020, 06:33 PM

হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানোর এই প্রক্রিয়া সাধারণভাবে খুব সহজ হলেও এর মিশ্রণের তারতম্যে হতে পারে মানের ঘাটতি। আর তাতে জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা যাবে কমে। মানুষ নিজেকে সুরক্ষিত ভাবলেও আসলে তা হবে না। 

নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ঘরে বসে হ্যান্ড স্যানেটাইজার বানানোর সময় প্রয়োজনীয় মাত্রায় অ্যালকোহল ব্যবহারে ভুল হতে পারে। এমনকি উপাদানগুলো মেশানোর সময় তাতে দূষণও ঘটতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও লুইজিয়ানার ১৫টি স্বাস্থকেন্দ্রের সংগঠন স্যানোভা ডারমাটোলজির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. টেড লেইন বলেন, এ ধরনের রাসায়নিক উৎপাদনের যে পরিশুদ্ধ ব্যবস্থা দরকার, বাসাবাড়িতে তা থাকে না।

“নিজে নিজে বানাতে গেলে অ্যালকোহলের অনুপাত ভুল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাছাড়া যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে এই মিশ্রণ নাড়া হবে সেসব পরিশুদ্ধ করা নাও থাকতে পারে; তাতে ওই স্যানিটাইজারেই হয়ত ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও ভাইরাস মিশে যাবে।”

“অনেকেই সুগন্ধি ও তেল ও আরো কিছু মেশাচ্ছেন; এসব ত্বকের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে, কারো কারো অ্যালার্জির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।”

তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হল, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হোক, অথবা ঘরে, জীবাণু ধ্বংস করতে সাবান-পানির চেয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কখনোই বেশি কার্যকর নয়।

“আমি তো বলবো সাবান আর পানি দিয়েই হাত ধুতে; তারপর ত্বকে কোনো ক্রিম-লোশন মেখে নিতে,” বলেন লেইন।

ছবি: রয়টার্স

হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানাতে কয়েকটি উপকরণের মিশ্রণের যে অনুপাত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘূরছে, তা তুলে ধরে এর কার্যকারিতায় ঘাটতি থেকে যাওয়ার কথা বলছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদন।

অনেকেই ৯১ শতাংশ রাবিং অ্যালকোহল আর অ্যালোভেরা জেলের মিশ্রণে স্যানিটাইজার বানানোর পরামর্শ দিচ্ছেন ফেইসবুকে।

এ দুইয়ের মিশ্রণের পর অ্যালকোহলের পরিমাণ ঠেকছে ৬০ দশমিক ৬ শতাংশে। আর এই পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যূনতম ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল ব্যবহারের নির্দেশনা থেকে খুব সামান্যই বেশি।

যদি ৭০ শতাংশ আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহল দিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানো হয়, তবে বাকি উপকরণ মেশানোর পর এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশ; এই পরিমাণ অ্যালকোহলের জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা থাকবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ওয়েবসাইটেও সাবান-পানিতে হাত ধোয়ার নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে।

সিডিসি বলছে, অ্যালকোহল দিয়ে তৈরি স্যানিটাইজার হাতে থাকা অনেক ধরনের অণুজীব দ্রুত ধ্বংস করতে পারলেও সব ধরনের জীবাণু মেরে ফেলার ক্ষমতা এর নেই।

ছবি: রয়টার্স

হাতে যদি নোংরা বা তৈলাক্ত কিছু লেগে থাকে, তাহলে স্যানিটাইজার ভালো কাজ করবে না। কীটনাশকের মত বিষাক্ত রাসায়নিক হাতে লেগে থাকলেও স্যানিটাইজার ততটা কার্যকর হবে না।

ইথাইল অ্যালকোহল বা ইথানল দিয়ে স্যানিটাইজার গিলে ফেললে তা মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করবে বলেও হুঁশিয়ার করেছে সিডিসি।

হাতের নাগালে স্যানিটাইজার পেয়ে এর সুগন্ধে আকৃষ্ট হয়ে অনেক সময় শিশুরা তা পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এজন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার শিশুদের নাগালের বাইরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে সিডিসি।

রেকটিফায়েড স্পিরিট (৯৫ শতাংশ ইথাইল অ্যালকোহলের জলীয় দ্রবণ) পান করে মৃত্যু হওয়ার ঘটনা অনেকবারই শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে। 

ছবি: রয়টার্স

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্কটের পর হাসপাতালগুলোর চাহিদা মেটাতে কিছু অ্যালকোহলিক বেভারেজ কোম্পানি এই সময় স্যানিটাইজার বানানো শুরু করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে এরা এমনভাবে স্যানিটাইজার বানাচ্ছে যেন স্প্রে করা যায়। এই মিশ্রণে তারা ব্যবহার করছে ৯৬ শতাংশ ইথানল অথবা ৯৯ দশমিক আট শতাংশ আইসোপ্রোপাইল। ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার জন্য যোগ করা হচ্ছে তিন শতাংশ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড; আরো যোগ করা হয় গ্লিসারিন ও শোধিত পানি। 

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কেরু অ্যান্ড কোম্পানিও এখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানাচ্ছে। কেরুর হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম বলেও দাবি করছে তারা।

দেশে দোকানে দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সঙ্কট দেখা দিলে বিভিন্ন সংগঠনকে নিজেদের উদ্যোগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় শ্রমজীবী মানুষের মাঝে বিতরণ করতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন