চেম্বার-ডায়াগনসিস বন্ধ, রোগীদের দুর্ভোগ চরমে

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে চেম্বারে বসছেন না অনেক চিকিৎসক এবং অনেক জায়গায় টেকনিশিয়ানরা কর্মস্থলে না থাকায় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাও বন্ধ আছে বলে প্রায় রোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2020, 05:41 AM
Updated : 2 April 2020, 05:52 AM

অনেক রোগী কয়েক হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন- এমন ঘটনা প্রায়ই আসছে গণমাধ্যমে। রোগী রেখে চিকিৎসকদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও পাওয়া গেছে।  এমন পরিস্থিতিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দুর্ভোগ ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরেছেন অনেক রোগী।।

কাঁধ ও ঘাড়ের ব্যথা নিয়ে বুধবার নরসিংদী থেকে ধানমণ্ডির পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য আসেন ব্যবসায়ী রবিউল্লাহ। চিকিৎসক তাকে এমআরআই করার পরামর্শ দেন। কিন্তু সেখানকার ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি সেদিন বন্ধ ছিল। তাকে শান্তিনগর অথবা বাড্ডা শাখায় গিয়ে পরীক্ষাটি করতে বলা হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তারা বলল যে স্টাফ নাই। এ কারণে এখানে পরীক্ষা হবে না। বাধ্য হয়ে শান্তিনগর গিয়ে এমআরআই করাই।”

পেটে ব্যাথার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধের মধ্যে অনেক দূর থেকে বহু কষ্টে এই হাসপাতালে আসে সত্তরোর্ধ্ব আবদুল মজিদ মোল্লা। বুধবার তিনি চিকিৎসক দেখাতে পারলেও তার পরামর্শমতো কলোনস্কপি সংশ্লিষ্টদের অনুপস্থিতির কারণে করাতে পারেননি।

জানতে চাইলে মজিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা (কলোনস্কপি) করবে তারা নাকি নাই। এজন্য এক মাস পর আবার আসতে বলছে। অনেক দূর থেকে আসছিলাম।”

থাইরয়েড সমস্যার কারণে ল্যাবএইডের মিরপুর শাখায় এক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেন রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা ফিওনা। ২৮ দিনের ওষুধ খাওয়া শেষে ওই চিকিৎসককে আবার দেখিয়ে রক্ত পরীক্ষা করার কথা ছিল।

কিন্তু ১ এপ্রিলের জন্য ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে তিনি ২৫ মার্চ ল্যাবএইডে গিয়ে তা বন্ধ পান। পরে আরও দুদিন গিয়েও খোলা পাননি বলে জানান তিনি।

ফিওনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডাক্তার বলেছিল, ব্লাড টেস্ট করে মেডিসিনটা কমিয়ে দেবে। কিন্তু মিরপুর ল্যাবএইড বন্ধ।

“এখন ডাক্তার না দেখিয়ে আমি পরীক্ষাই করাবো কীভাবে, আর ওষুধ কতটুকু খেতে হবে সেটাই বা বুঝব কীভাবে।”

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা অন্তঃস্বত্তা বাঁধন জানান, ২৬ মার্চ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তিনি তার চিকিৎসকের চেম্বারে ফোন করে কোনো সাড়া পাননি। পরে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে কল করলে বাঁধনকে কোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পরার্মশ দেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাড়ির পাশে মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সেন্টারে গেলে সেখান থেকে জানানো হয়, ডেলিভারি ছাড়া আর কোনো সেবা দেওয়া তারা বন্ধ রেখেছেন।

“অথচ ওই সময় অনেক ব্লিডিং হচ্ছিল। পরে আমার পরিচিত একজনের সহায়তায় অনেক কষ্টের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দেন চিকিৎসক।”

এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মীদের অনেকেই হয়তো ভয়ে আসছে না। তাছাড়া যানবাহন বন্ধ থাকায় অনেকে অফিসে না গিয়ে থাকতে পারেন। ছুটিতে গ্রামে চলে যাওয়ার কারণেও কর্মী সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কিন্তু চেম্বারে বসতে চিকিৎসকদের আহ্বান জানানো হয়েছে।

“আমরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি, অনেকদিন হয়ে গেছে। যারা যারা আসেননি তারা যেন তাদের চেম্বারে বসেন। আমরা চেষ্টা করছি, সবাই ভিড়ের মধ্যে না গিয়ে যার যার চেম্বারে যেন বসে।”

এ বিষয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিকিৎসক নেতা ও স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বৃহস্পতিবার থেকে চিকিৎসকদের চেম্বারে বসা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।

৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত এ রোগে ৫৪ জনের সংক্রমিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে আইইডিসিআর, মারা গেছেন ৬ জন।

সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর পিপিই না নেই জানিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকরা রোগীদের ফিরিয়ে দেয়। ছোঁয়াচে রোগ কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সব হাসপাতালে সব রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের জন্য বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা দিলেও সমালোচনা ও গণপদত্যাগের হুমকির মুখে তা প্রত্যাহার করে সরকার।