করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে, তবে মৃদু: স্বাস্থ্য বিভাগ

বিশ্বজুড়ে মহামারী রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশে সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমিত হচ্ছে বলে স্বীকার করলেও তা মৃদু মাত্রায় রয়েছে বলে মনে করছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2020, 10:30 AM
Updated : 1 April 2020, 10:41 AM

কোভিড-১৯ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইপিইএইচ) ভাইরোলজিস্ট খন্দকার মাহবুবা জামিল এতথ্য জানান।

ভিডিও কনফারেন্সে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে, তবে মৃদু লেভেলে। কারণ যে পরিমাণ স্যাম্পল আসছে তার তুলনায় করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম।

“কমিউনিটি ট্রান্সমিশন যদি বেশি হত তাহলে সবগুলোতে আমরা পজিটিভ পেতে পারতাম। মোট কথা, আমরা অনেক বেশি পজিটিভ পেতে পারতাম- সেই সেন্স থেকে আমরা বলতে পারি, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে, তবে সেটা মৃদু লেভেলে হচ্ছে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, বুধবার পর্যন্ত সারা দেশে ১৭৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

অর্থাৎ সংগৃহিত মোট নমুনার তুলনায় নভেল করোনাভাইরাসে নিশ্চিত আক্রান্তের হার ৩ শতাংশের সামান্য বেশি।

সংগৃহিত নমুনার কত শতাংশ পজেটিভ হলে তাকে ‘কমুনিটি ট্রানমিশন’ বলে তা জানতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

দুজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার কথা হলেও তারা এবিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি।

বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর জনগণ আক্রান্ত হতে শুরু করলে তাদের নমুনা পরীক্ষার পর আইইডিসিআর বলেছিল, তাদের কেউ এসেছেন কোভিড-১৯ সংক্রমিত দেশগুলো থেকে, আর কেউ সেসব আক্রান্ত প্রবাসীর সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন।

কিন্তু গত ২৫ মার্চের আগে দুজনের নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের উৎস খুঁজে না পেয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশের কোথাও কোথাও ‘সীমিত আকারে’ নভেল করোনাভাইরাসটির সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। 

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত দেশগুলো থেকে প্রবাসীরা ফিরে আসার পরে তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু প্রবাসীদের অনেকে তা মেনে পারিবারিক ও সামাজিক আয়োজনে অংশ নিতে শুরু করে।

তাদের মাধ্যমেই নভেল করোনাভাইরাস দেশে ছড়াচ্ছে বলে ধারণা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।

আক্রান্তদের অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগের বিষয়ে বুধবার ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, অনেক জায়গাতে সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

“পুরান ঢাকার দিকে, বিভিন্ন জেলার ইউনিয়নগুলোতে, ঢাকা থেকে যারা গ্রামে গিয়েছেন তাদের অনেকে বাজারে, টি স্টলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনাদের বলছি, ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। বাইরে বের হয়ে দেশের মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না।’

হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম না মানলে সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী, জেল-জরিমানার কথা তুলে ধরেও সতর্ক করেন তিনি।

ইতালিফেরত প্রবাসীদের একটি বড় অংশ মাদারীপুর, ফরিদপুর ও শিবচর এলাকার বাসিন্দা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত ১৯ মার্চ জানিয়েছিলেন, ওইসব এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ওই দিনই শিবচর উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট এলাকা লকডাউন করে দেন।

শিবচরের পর থেকে দেশের কোথাও করোনাভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে, সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে।

গত ২৩ ও ২৪ মার্চ রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগে দুই বৃদ্ধের মৃত্যুর পর এলাকাজুড়ে সতর্কতা জারি করে স্থানীয় ভবন মালিকরা।

পরে রাজধানীর বুয়েটেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে ১৪ দিনের জন্য বুয়েটের আবাসিক এলাকা লকডাউন করা হয়।

এছাড়া টাঙ্গাইল,শেরপুর, বান্দরবান, মানিকগঞ্জসহ দেশের নানা প্রান্তে করোনাভাইরাসে সন্দেহে অনেক বাড়িকে লকডাউন করে বাসিন্দাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস যেন সামাজিকভাবে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য সরকার গুরুত্বারোপ করছে সামাজিক দূরত্বের উপর। ২৬ মার্চ থেকে ঘোষিত সাধারণ ছুটির মেয়াদ আরও পাঁচ দিন বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।