বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সহায়তা চাইলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2020, 03:05 PM
Updated : 25 March 2020, 03:05 PM

অতি সংক্রামক এই ভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতির অগ্রগতি নিয়ে বুধবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনলাইন ব্রিফিংয়ে এই আহ্বান জানান তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা আহ্বান করব, আমাদের যারা প্রাইভেট হাসপাতালগুলো আছে তারাও যেন তাদের হাসপাতালে কোনো রোগী গেলে তারা যেন ফিরে না যায়। এবং ডাক্তার-নার্স যারা আছে তাদের কাছে আহ্বান করব, তারা যেন সেবা থেকে পিছপা না হয়, যথাযথ প্রটেকশন নিয়ে সেবা দেবে।

“আমরা চাই যে, যেগুলো বড় বড় বেসরকারি হাসপাতাল আছে তারা আইসোলেশন ওয়ার্ডও তৈরি করবে, যাদের সক্ষমতা রয়েছে। আপনারা তো দেশের অর্ধেক সেবা দিয়ে থাকেন, এই ক্রান্তিলগ্নে যদি সেবা থেকে পিছপা হন তাহলে জাতির কাছে একটা সিগন্যাল যায়। আমরা আশা করি সেটা হবে না।”

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে। সেখানে আইসোলেটেড জায়গা রয়েছে, মডার্ন ফ্যাসিলিটিজ রয়েছে।”

এর আগে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল, মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতাল ও যাত্রাবাড়ীর সাজেদা ফাউন্ডেশন- এই পাঁচটি হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য ২৯টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেগুলোতে আরও ১৬টি আইসিইউ বেড প্রস্তুতির কাজ চলার কথাও বলা হয়েছিল।

করোনাভাইরাস নিয়ে নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে প্রতি জেলায় পাঁচটি করে হটলাইন নম্বর চালুর ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও হটলাইন নম্বর বাড়ানো হচ্ছে, ১৭টি থেকে বাড়িয়ে এখন ৫৭টি নম্বর চালু থাকবে। সারা দেশ মিলিয়ে ৩৫০টি নম্বর চালু থাকবে।

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের বহনের জন্য প্রতিটি জেলায় একটি করে অ্যাম্বুলেন্স নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নতুন ১০টি ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আমরা ১০টি ল্যাব স্থাপন করে দিয়েছি। অল্প দিনের মধ্যে সেগুলো চালু হয়ে যাবে।”

এ বিষয়ে সকালে ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ঢাকার আইইডিসিআরের পাশাপাশি ঢাকার জনস্বাস্থ্য হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কভিড-১৯ রোগের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আর ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইইডিসিআরের ফিল্ড ল্যাবরেটরি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এ পরীক্ষা পদ্ধতি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় নতুন করে প্রায় দুইশটি ভেন্টিলেটর পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাতে ৫ হাজার পার্সোনাল সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) তুলে দেন। আরও ৫ হাজার পিপিই দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও ৬ হাজার পিপিই দিচ্ছেন বলে জানান এনামুর রহমান।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, চীন থেকে প্রথম দফায় সরকারিভাবে ১০ হাজার টেস্টিং কিট ও ১০ হাজার ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পিপিই) আসছে।

কভিড-১৯ থেকে নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে পিপিই চাইছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমেরিকার মতো দেশও আমাদের কাছ থেকে পিপিই চাইছে। আজকে আমি যখন এখানে, তখন তাদের রাষ্ট্রদূত আমার কলিগদের সঙ্গে বসে মিটিং করছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা রয়েছেন।”

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, তিন লাখ পিপিই ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় এক লাখ মজুদ আছে। আরও দুই লাখ অর্ডার করা হয়েছে।

“আমাদের ডাক্তার-নার্স যারা আছেন তাদের সুরক্ষাই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।“

পিপিই’র কোনো অভাব হবে না বলে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের আশ্বস্ত করেন তিনি।

এই ভাইরাসের কবল থেকে সুরক্ষায় সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

হোমা কোয়ারেন্টিন না মানলে জেল-জরিমানার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা এটা তাদের মঙ্গলের জন্য করছি। যারা বিদেশ থেকে আসছেন, তারা নিজেদের নিরাপদে রাখবেন, দেশবাসীকে নিরাপদে রাখবেন আশা করি। যারা মানবে না, আইন ভঙ্গ করবে, তাদের জন্যই এ আইনি ব্যবস্থা।”

ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার যে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে তার সফলতাও দেশবাসীর উপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।