করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষার উপায়

অতি সংক্রামক নভেল করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় সবার প্রতি জনসমাগম এড়িয়ে চলার সঙ্গে বন্ধু, সহকর্মী ও স্বজনদের থেকেও দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2020, 03:14 PM
Updated : 31 March 2020, 03:03 AM

সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে এরইমধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ বহু দেশ ও অঞ্চলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই পরিবারের নন এমন দুজন ব্যক্তিকে কোথাও একসঙ্গে মিলিত হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।  সামাজিক মেলামেশা নিয়ন্ত্রণে বিয়ে ও উপাসনালয়ে যাওয়ায়ও এখন কঠোর নিষেধাজ্ঞা।

এরমধ্যে যুক্তরাজ্যে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৩৩৬ জনের। ইউরোপের ইতালি, স্পেন, ফ্রান্সের পর যুক্তরাজ্যেই মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ঘরের বাইরে বার হওয়ার নিয়মও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেমন- জরুরি নিত্যপণ্য কেনাকাটা করতে দোকানে যাওয়া যাবে, শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে সেবা নিতে অথবা স্বাস্থ্যকর্মীদের বেলায় কাউকে সেবা দিতে বের হওয়া যাবে। এড়ানোর উপায় নেই এমন পেশার ক্ষেত্রেই কেবল অফিসে গিয়ে কাজ করা যাবে।

বাইরে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়লে কী উপায়?

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, খাবার বা ওষুধ ইত্যাদি কেনার জন্য যদি দোকানে যেতেই হয় তবে সেখানে অন্যাদের থেকে কমপক্ষে দুই মিটার বা সাড়ে ছয় ফুট দূরত্বে দাঁড়াতে হবে।

নভেল করোনাভাইরাসের দিনে জনসমাগম এড়াতে ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল ও অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোও বন্ধ করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। আর এসবই করা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় স্পর্শ কমিয়ে আনতে।

যারা শুকনো কাঁশি ও জ্বরে ভুগছেন তাদের ঘরে একাকি থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যেন ওই ব্যক্তি থেকে অপর কেউ আক্রান্ত না হন।   

একজন ব্যক্তি কীভাবে একাধিক ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারেন, তা একটি সচিত্র পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেখিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

গত শুক্রবারের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম যে কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয় তিনি চীনের উহান শহর ভ্রমণ করে ফিরেছিলেন। তার থেকে একাধিক ব্যক্তির মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস।

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছয় নম্বর রোগীটির বিদেশ ভ্রমণের কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও তিনি আক্রান্ত কয়েকজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত হয়েছেন ৩১ নম্বর রোগী। তার থেকেই সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীরে ভাইরাস প্রবেশের পর শনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন জায়গায় চলাচলের কারণে তার সংস্পর্শে আসে প্রায় এক হাজার ১৬০ জন।  

 

সামাজিক দূরত্ব কেন আবশ্যক?

আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি দিলে এর কফের কণা ছড়িয়ে পরে বাতাসে। এতে ভাইরাসের উপস্থিতিও থাকতে পারে। ওই ব্যক্তির সামনে কেউ থাকলে বা পাশ দিয়ে হেঁটে চলার সময় শ্বাস গ্রহণ করলে সেই ব্যক্তিও ভাইরাস টেনে নিনে নিতে পারেন নিজের ভেতর। এছাড়া ওই কফ কণা পড়েছে এমন জায়গায় হাত পড়লে সেই হাত না ধুরে মুখ-নাক স্পর্শ করলেও জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে।

বিবিসির পরামর্শ, এ সময় মানুষ যত কম একসঙ্গে কাটাবে, ওই ভাবে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ততোটাই কমে আসবে।

ভাইরাস সংক্রমণে লাগাম টানতে গত ৯ মার্চ থেকে ইতালিজুড়ে সব কিছু বন্ধ (লকডাউন) করা হয়েছে। স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় সেখানেও খাবার ও ‍ওষুধ কেনা ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া নিষেধ।

যুক্তরাষ্ট্রেও কোটি লোককে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

১৫ দিনের জন্য লকডাউন রয়েছে ফ্রান্স; এর মধ্যে কেউ ঘরের বাইরে যেতে চাইলে তাকে উপযুক্ত কারণ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখাতে হবে। কেউ এই নিয়ম ভঙ্গ করলে ১৩৫ ইউরো জরিমানা করা হচ্ছে। আর এজন্য ফ্রান্সে মোতায়েন করা হয়েছে এক লাখেরও বেশি পুলিশ।

জার্মানিতে পরিবারের সদস্য ছাড়া বাইরে দুজন একসঙ্গে হতে পারবে না। দেশটির বাভেরিয়া রাজ্যে বাসিন্দাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

‘সেলফ আইসোলেশন’ কী?  

‘সেলফ আইসোলেশন’ বা ঘরে একাকী থাকার অর্থ অতি গুরুতর প্রয়োজন দেখা না দিলে বাইরে পা রাখা যাবে না।

কাজে, স্কুলে, জনসমাগমে তো যাওয়াই যাবে না, সম্ভব হলে খাবার কেনার জন্য ঘরের বাইরে বার হওয়াকেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

কারা এই সময় নিজেকে বন্ধু-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবেন?

এই সময় যারাই কফ, জ্বর অথবা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাদের সবাইকেই অন্যের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধে নিজেকে তাদের থেকে আলাদা করে নিতে হবে।

যদি কেউ একাই বাস করেন, তাহলে অন্তত সাতদিন পর্যন্ত ঘরে থাকতে হবে।

যদি ঘরে আর কোনো সদস্য থাকে, তবে অবশ্যই নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে অন্তত ১৪ দিন যার যার মত ঘরেই থাকতে হবে।

যদি কেউ ১৩ দিনের মাথায় অসুস্থ বোধ করেন, তবে আরও সাত দিন নিজেকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

এমন ঘরে থাকতে হবে যেখানে বাতাস চলাচলের উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে। ঘরে জানালা থাকতে হবে যেন মাঝেমাঝেই তা খোলা রাখা যায়।

কাদের একেবারে বাইরে যাওয়া উচিত নয়?

আগে যে বিভিন্ন জটিল রোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের এখন ঘরের বাইরে যাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এই ব্যক্তিরা হলেন-

ক্যান্সার রোগী

কিডনি, ভাল্বসহ অরগান প্রতিস্থাপন হয়েছে যাদের।

কিছু জিনগত রোগ বহন করছেন যারা।

ব্রোঙ্কাইটিস, সিস্টিক ফিব্রোসিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের গুরুতর সমস্যা রয়েছে যাদের।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে রাখে এমন ওষুধ সেবনকারী ব্যক্তি।

হৃদরোগ রয়েছে এমন গর্ভবতী নারী।