সুস্থ হয়ে উঠেছেন করোনাভাইরাসের লাখো রোগী

বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসে এই পর্যন্ত যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, তার এক-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে সেরে উঠেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2020, 07:48 PM
Updated : 8 April 2020, 07:46 PM

ইউরোপের বিপর্যস্ত দেশ ইতালিতে মৃতের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কমেছে। সংক্রমণ ঘটার পর দক্ষিণ কোরিয়ায়ও একদিনে সর্বনিম্ন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্থিতিশীল রয়েছে চীনের পরিস্থিতিও।

তবে ভিন্ন চিত্র যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে; বাংলাদেশেও একদিনে রোগী বেড়েছে ছয়জন, যা একদিনে সর্বোচ্চ।

কভিড-১৯ রোগের বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি সোমবার রাতে সর্বশেষ যে তথ্য হালনাগাদ করেছে, তাতে এই চিত্রের দেখা মেলে।

সেই তথ্য অনুযায়ী, সোমবার নাগাদ বিশ্বের ১৬৮ দেশ ও অঞ্চলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ৮৫ জন।

বিশ্বে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৮১, বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। অন্য প্রদেশগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার পর ভিন্ন দেশেও ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়।

তখন এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয় নভেল করোনাভাইরাস, আর এর ফলে সৃষ্ট রোগ নাম পায় কভিড-১৯; যার লক্ষণ জ্বর, মাথাব্যথা ও শ্বাসজনিত সমস্যা।

শুরুতে চীনে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকলেও মাস দুয়েকের মধ্যে তারা পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছে।

চীনের পর প্রথমে দক্ষিণ কোরিয়া এবং এরপর ইতালিতে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। কোরিয়া পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারলেও ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে চীনকেও।

গত শনিবার ইতালিতে রেকর্ড সংখ্যক ৭৯৩ জনের মৃত্যুর পর রোববার তা ৬৫১ জনে নেমে এসেছিল।

সোমবার মৃতের সংখ্যা আরও কমে নেমে আসে ৬০২ জনে। নতুন আক্রান্তের সংখ্যাও ৯ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ১ শতাংশে কমে এসেছে।

সোমবারের ৬০২টি মৃত্যু নিয়ে ইতালিতে মৃতের মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৭। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯২৭।

দক্ষিণ কোরিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৪ জন। চীন থেকে দেশটিতে ছড়ানোর পর একদিনে এত কম রোগী আগে দেখা যায়নি।

দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৯৬১; মারা গেছেন মোট ১১১ জন।

আক্রান্তের দিক থেকে এখনও শীর্ষে থাকা চীনে ৮১ হাজার ৪৯৬ জন কভিড-১৯ রোগীর মধ্যে প্রায় ৭৩ হাজার জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে ইরান, স্পেন, জার্মানি, যুক্তরাজ্যকে ছাড়িয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে ৮ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৭০৮ জনে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচশ।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নিউ ইয়র্কে; সেখানে এখন ১৫ হাজারের বেশি মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। বিশ্বে কভিড-১৯ রোগী যত, তার ৫ শতাংশই নিউ ইয়র্কে। রাজ্যটিতে মারা গেছেন ৯৮ জন।

যুক্তরাজ্যেও মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৫ হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪২৪ জন।

স্পেনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৬ জনে, দেশটিতে আক্রান্ত এখন ৩৩ হাজার ৮৯ জন।

ইরানের মোট আক্রান্ত এখন ২৩ হাজার ৪৯ জন, মারা গেছেন ১ হাজার ৮১২ জন।

সার্বিক পরিস্থিতি দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নভেল করোনাভাইরাস এখন দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে।

সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস সোমবার জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখে পৌঁছতে সময় লেগেছিল ৬৭ দিন, এক লাখ থেকে দুই লাখে যেতে সময় লেগেছে ১১ দিন। আর চার দিনেই রোগীর সংখ্যা দুই লাখ থেকে তিন লাখে পৌঁছে গেছে।”

এই পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্বনেতাদের এক হয়ে কাজ করার উপর জোর দিচ্ছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।