করোনাভাইরাস:  জানা দরকার যে ১০ প্রশ্নের উত্তর

বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ পাওয়া নভেল করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে আতঙ্ক, সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে অসংখ্য গুজব।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2020, 07:07 AM
Updated : 14 March 2020, 01:51 PM

সংবাদমাধ্যম, সোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সাধারণ মানুষের যে প্রশ্নগুলো আসছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১১টি প্রশ্ন বাছাই করে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

নভেল করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেয় কত দিনে?

চিকিৎসকদের বরাতে বিবিসি বলছে, সাধারণত পাঁচ দিনের মধ্যেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দিতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।

সংক্রমণের সন্দেহ হলে অন্তত ১৪ দিন নজরদারিতে রাখার কথা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে কোনো কোনো গবেষক ২৪ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখার পক্ষে।

রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার সম্ভাব্য সময় জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে রোগের বিস্তার রোধে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন। 

একবার সেরে উঠলে এ রোগ আবার হতে পারে?

যেহেতু নতুন করোনাভাইরাসের সাথে মানুষের পরিচিয় ঘটেছে আড়াই মাস হল, তাই এখনই এই প্রশ্নের সুনিশ্চিত উত্তর দেওয়া কঠিন।

তবে এর মধ্যে যেটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা থেকে বলা যায়,  নভেল করোনাভাইরাসসহ যে কোনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে এন্টিবডি  বা রোগী প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে উঠলে সেই ভাইরাস আর সংক্রমণ ঘটাতে পারে না।

বিবিসি জানাচ্ছে, সার্সসহ অন্য যে করোনাভাইরাসগুলো এর আগে ছড়িয়েছে, সেগুলোতে আক্রান্ত রোগীরা  পুরোপুরি সেরে ওঠার পর ফের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা নেই।

এবার নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পর চীনের কিছু মেডিকেল রিপোর্টে বলা হচ্ছে, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরও কয়েকজনের মধ্যে নতুন করে ভাইরাস ধরা পড়েছে। তবে সেসব পরীক্ষার ফলাফল সঠিক ছিল কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কেউ একবার সুস্থ হয়ে উঠলে তার মাধ্যমে আর ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই।

করোনাভাইরাস আর ফ্লুর তফাত কী?

বিবিসি লিখেছে, করোনাভাইরাস আর সাধারণ ফ্লুর উপসর্গগুলোর মধ্যে বেশ কিছু মিল রয়েছে। ফলে পরীক্ষা না করে এটা বোঝা মুশকিল হয়ে ওঠে।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে যে রোগ হচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯। এর প্রধান উপসর্গ জ্বর, কাশি। এসব উপসর্গ ফ্লুতেও থাকে। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু হলে গলা ব্যথার মত উপসর্গও থাকে। আবার নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেকের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে, যা ফ্লুতে দেখা যায় না।

 

বাংলাদেশে কারও নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ, লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে সরাসরি জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। বরং বাড়িতে থেকে হটলাইন নম্বরে (০১৯৪৪৩৩৩২২২) ফোন করলে তারাই বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করবে বলে জানানো হয়েছে।

স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে কী করতে হবে?

স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে থাকার অর্থ হল ১৪ দিন মেলামেশা এড়িয়ে নির্দিষ্ট একটি ঘরে অবস্থান করা। এ সময় কর্মস্থল, স্কুল বা জনসমাগম স্থলে যাওয়া যাবে না। পাশাপাশি গণপরিবহন বা ভাড়ায় চালিত যানবাহন যেমন ট্যাক্সি, অটোরিকশা ব্যবহার করা যাবে না। ঘরে অবস্থানকালে পরিবারের অন্যদের সংস্পর্শও এড়িয়ে চলতে হবে।

এ সময় বাজার করা, কেনাকাটা,  ওষুধ কেনা বা অন্য কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে নিজে না গিয়ে কারো সহায়তা নেওয়াই ভালো। হোম ডেলিভারিতে বাসার দরজায় এসে পণ্য নামিয়ে দিয়ে গেলে সমস্যা নেই; তবে বাইরের কারও ঘরে ঢোকা ঠিক হবে না। 

অ্যাজমা রোগীর ক্ষেত্রে নভেল করোনাভাইরাস কতটা ঝুঁকিপূর্ণ

যারা ইতোমধ্যে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাদের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা আরো বাড়তে পারে।

যুক্তরাজ্যের অ্যাজমা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, যারা এই মুহূর্তে কভিড-১৯ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা যেন অ্যাজমা রোগে নিজেকে ভালোর রাখার প্রয়োজনীয় সকল পদ্ধতি মেনে চলেন।  যেমন, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিয়মিত ইনহেলার নিতে হবে। সেক্ষেত্রে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও হঠাৎ অ্যাজমা অ্যাটাক এড়ানো সহজ হবে। 

দরজার হাতল থেকে কি নভেল করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে?

কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির  হাঁচি-কাশির সময় হাতে কফ বা থুথু লেগে গেলে তারপর যদি ওই ব্যক্তি কোনো কিছু স্পর্শ করেন, তবে ভাইরাস ওই বস্তুতেও ছড়িয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে দরজার হাতলে ভাইরাস লেগে থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো বস্তুর উপরিতলে এ ভাইরাস বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আর সে কারণে ঝুঁকি এড়াতে ঘন ঘন হাত ধোয়ার বিকল্প নেই। 

সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা কি নিরাপদ?

সুইমিং পুলের পানিতে ক্লোরিন মেশানো থাকে; এই রাসায়নিক ভাইরাস ধ্বংসে কার্যকর।  তাই সুইমিং পুলের পানিতে যদি যথাযথ মাত্রায় ক্লোরিন মেশানো থাকে, তাহলে তা নিরাপদ।

তবে সাঁতারের পর কাপড় বদলের কক্ষে মানুষের সংস্পর্শে  এলে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।

মাস্ক পরলে কি ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যাবে?

চিকিৎসকরা প্রায়ই মুখে মাস্ক পরে থাকেন, তবে সাধারণ মানুষের বেলায় এর কার্যকারিতা নিয়ে তেমন কোনো প্রমাণ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় তারা কোনো ফেইসমাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে চান না। বরং নিয়মিত হাত ধুলে সুরক্ষিত থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। তবে কেউ আক্রান্ত হলে তার মাস্ক পরা উচিৎ, যেন তার মাধ্যমে অন্যদের অন্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়। 

শিশুরা কতটা ঝুঁকিতে?

চীনের তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, শিশুদের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমই ঘটেছে। তবে শিশুদের মধ্যে যাদের অ্যাজমা রয়েছে, তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

আক্রান্তের হাতের রান্না করা খাবার খেলে কি সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে?

কভিড-১৯ আক্রান্ত কারো হাতে রান্না করা খাবার যদি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিবেশন করা না হয়, তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি অবশ্যই থাকবে।  হাতে লাগা কফ বা জীবাণু রোগ থেকে ছড়াতে পারে।

সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে খাবার স্পর্শ করা বা খাওয়ার আগে সবাইকেই হাত ধুয়ে নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসরা।