চীন ফেরত নাগরিকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ

নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যু বাড়তে থাকায় গত দুই সপ্তাহে চীন থেকে ফেরা সব নাগরিকের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2020, 04:25 AM
Updated : 30 Jan 2020, 04:25 AM

দেশের সব জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সিভিল সার্জনদের নিজ নিজ জেলায় এ তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার ভাইরাস কন্ট্রোল রুমে এক বৈঠক হয়। সেখানেই চীন ফেরত নাগরিকদের তালিকা তৈরির এ নির্দেশ আসে।

“সভা থেকে সিভিল সার্জনদের করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করে এর সংক্রমণ রোধে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের তা অবহিত করতে অনুরোধ জানানো হয়।”

এছাড়া ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতিকেও চীন ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই বৈঠকে।


গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নতুন ধরনের এ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে, যাকে বলা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস বা ২০১৯-এনসিওভি। এ ভাইরাসে বুধবার পর্যন্ত ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, কেবল চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৭১ জনে।

চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে আরও ১৯ জায়গায় অন্তত ৯১ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশে এখনও কারও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য সরকারের তরফ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। 

ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সব যাত্রীদের যেতে হচ্ছে থার্মাল স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। লক্ষণগুলো হতে পারে অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। সাধারণ ফ্লুর মতই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগের ভাইরাস।

চীন থেকে আসা কারও মাধ্যমে যাতে বাংলাদেশে এ ভাইরাস ছড়াতে না পারে, সেজন্য সকল স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।

কারও মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণ বা বাড়তি তাপমাত্রা দেখা গেলে তাকে আলাদা করে পর্যবেক্ষণে রাখতে বলা হচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কর্মরত ৩৫ চীনা নাগরিক দেশে ছুটি কাটিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ফেরায় তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত চীন আসা ৩ হাজার ৩৪৮ জন যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে বিমানবন্দরে। তবে সন্দেহজনক কোনো রোগী মেলেনি। এখন পর্যন্ত আইইডিসিআরের হটলাইনে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ৯টি কল এসেছে। তবে দেশে কারও মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে মানুষের দেহে এ ভাইরাস সংক্রমণের পর লক্ষণ দেখা দিতে পারে এক থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। কিন্তু লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার আগেই এ ভাইরাস ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে। ফলে বিমানবন্দরে তাপমাত্রা পরীক্ষার ওই পদ্ধতি সংক্রমিত ব্যক্তিকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকর নাও হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।