এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ ইমার্জেন্সি বিভাগের প্রধান মাইকেল রায়ান বলেছেন, পুরো বিশ্বের এখন সতর্ক হওয়া দরকার, প্রস্তুত হওয়া দরকার যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য।
চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এক দিনেই ১৩২ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭০।
নতুন করে দুই হাজারের বেশি মানুষের দেহে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, কেবল চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৭১ জনে।
আর চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে আরও ১৯ জায়গায় অন্তত ৯১ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে চীনের বাইরে এ ভাইরাসে কারও মৃত্যুর তথ্য এখন পর্যন্ত আসেনি।
এদিকে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে এখনই আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সতর্কতা জারির প্রয়োজন আছে কি না, সে বিষয়ে আলোচনা হবে ওই বৈঠকে।
যারা কখনও চীনে যাননি এমন জার্মান, ভিয়েতনামিজ ও জাপানি নাগরিকদের মধ্যেও এ ভাইরাস ছড়ানোর ঘটনার দিকে ইংগিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহা মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বুধবার বলেন, “গত কয়েক দিনে কিছু দেশে যা হয়েছে, বিশেষ করে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে শুরু করেছে, এটা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
“যদিও চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে এখনও অনেক কম। কিন্তু এর মধ্যেই বড় আকারে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়ে গেছে।”
করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। পরিণতিতে ঘটতে পারে মৃত্যু। >> করোনাভাইরাস: যা যা জানা দরকার >> করোনাভাইরাস: নিরাপদ থাকতে যা করতে হবে >> করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ডব্লিউএইচও’র পরামর্শ নভেল করোনাভাইরাস এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হল, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। |
চীনের হুবেই প্রদেশের যে শহর থেকে এই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়েছে, সেই উহান এবং আশপাশের কয়েকটি শহর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে গত কয়েকদিন ধরে। হুবেই প্রদেশের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের বাস চলাচল বন্ধ রাখায় প্রায় ৬ কোটি মানুষ আংশিক বা পুরোপুরি অবরুদ্ধ দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
আরও কয়েকটি বড় শহরে পাবলিক বাস, ট্যাক্সি ও রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ রয়েছে। স্কুল ও দোকানপাটও আপাতত খুলছে না। কিছু জায়গায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়নি।
এ পরিস্থিতিতে চীনের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ২০২০ মৌসুমের সব ম্যাচ ও টুর্নামেন্ট স্থগিত ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন বিমান পরিবহন সংস্থা চীনের পথে ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে বা বন্ধ রেখেছে। স্টারবাক, ইকিয়ার মত কয়েকটি আন্তর্জাতিক চেইন শপ চীনে তাদের সব দোকান বন্ধ রাখছে। বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের চীনে যাতায়াতের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে তাদের নাগরিকদের উহান ও চীন থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। তবে দেশে ফেরানোর পর তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।
জাপান দুটো ফ্লাইটে তাদের নাগরিকদের টোকিওতে নিয়ে স্ক্রিনিং ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। তাতে তিনজনের দেহে নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের দুই শতাধিক নাগরিককে।
অস্ট্রেলিয়া তাদের নাগরিকদের চীন থেকে সরিয়ে ভারত মহাসাগরে একটি দ্বীপে নিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে, চীন থেকে আসা সব যাত্রীকে ১৪ দিন সরকারি ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।
ফ্রান্স, কানাডা, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, ভারতও তাদের নাগরিকদের চীন থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।