বিদেশফেরতদের দুই সপ্তাহ ঘর থেকে না বেরোনোর পরামর্শ

প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিদেশফেরতদের দুই সপ্তাহ ঘর থেকে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের একজন চিকিৎসক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2020, 04:30 PM
Updated : 28 Jan 2020, 04:35 PM

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এরইমধ্যে একশ ছাড়িয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫১৫ জনে, আগের দিনও যে সংখ্যা ২ হাজার ৮৩৫ জন ছিল।

চীনের বাইরে অন্তত ১৬ টি দেশে এ ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে। ২০০২ সালে সার্স এবং ২০১২ সালের মার্সের মতই একই পরিবারের সদস্য এ নভেল করোনাভাইরাস, যারা ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে।

ভাইরাসটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘নতুন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও করণীয়’ শিরোনামে সেমিনারে বক্তব্য দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

নভেল করোনাভাইরাইসের বিস্তার, রোগটি কীভাবে ছড়ায়, কারা আক্রান্ত হয় এবং ভাইরাসটি কীভাবে রোগ তৈরি করে তা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুনীরা জাহান।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ, প্রতিকার ও প্রস্তুতি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নামজুল হাসান। রোগের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যক্ষব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ।

ডা. নাজমুল হাসান বলেন, “করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখতে হবে, সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট অসুস্থ রোগীর সংস্পর্শে থাকা যাবে না।

“দেশের বাইরে থেকে কেউ আসলে দুই সপ্তাহ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া এবং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।”

রোগের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে ডা. শামীম আহমেদ জানান, জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশি, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা, ডায়রিয়া এই রোগের লক্ষণ।

“এসব লক্ষণ দেখা দিলে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই রোগে নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুস অকেজো হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কিডনী, হার্ট ও লিভার অকেজো হয়ে যায় এবং এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।”

এই চিকিৎসক বলেন, “করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। তবে রোগীকে অবশ্যই আলাদা থাকতে হবে। এছাড়া তরল ও পুষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।”

বাংলাদেশে এখনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত না হলেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

তিনি বলেন, “এই ভাইরাস প্রতিরোধেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুত রয়েছে।”

সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।